ছবি: সংগৃহীত
বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী মোত্তালিব মিহির। তবে এই সফলতার পথ এতোটা মসৃণ ছিল না। জীবন যুদ্ধে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। জীবিকার তাগিদে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবেও কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী।
শিক্ষাজীবনের বন্ধুর পথ পড়ি দিতে মিহির যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন পেশায়। কখনো টিউশনি, কখনো কোচিং-এ শিক্ষাকতা, কখনো প্রুফ রিডারের মতো কাজেও করেছেন।
বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাবুল ইসলাম ও জামিলা বিবির একমাত্র সন্তান মোত্তালিব মিহির। বাবা গ্রামে বর্গাচাষি এবং মা গৃহিণী। বাবার স্বল্প আয় চলত সংসার। তার একমাত্র স্বপ্ন কেবল সন্তান মিহিরের ভবিষ্যৎ।
আর্থিক দুরাবস্থার কারণে এক সময় চাচার বাড়িতে ছিলেন মিহির। পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল। এত বাধা-বিপত্তির মাঝেও তিনি এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে জিপিএ- ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
মোত্তালিব মিহির জানান, এইচএসসি পড়াশোনা শেষে ২০১২ সালে ঢাকায় এসে আর্থিক অভাব অনটনের জন্য আবারও পড়াশোনা প্রায় বন্ধ। একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। সারাদিন গেইটে বসে ডিউটির মাঝে ছিল তার পড়াশোনার সময়। ছুটি নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সম্পর্কে জানতেন। বন্ধুর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সম্পর্কে জেনে পড়াশোনার সেই উদ্দীপনা আবারও জাগে মিহিরের। সিকিউরিটি চাকরির বেতন হতে কিছু টাকা জমিয়ে ভর্তি হয়ে যান একটি কোচিংয়ে।
এভাবে চাকরির পাশাপাশি কোচিং করে ২০১৩ সালে ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পান তিনি। সিকিউরিটি চাকরিটি ছেড়ে দিলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এই ভয়ে ঢাকাতেই থেকে যান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন বলে জানান মিহির।
গ্রাজুয়েশন শেষ করে বিসিএস’সহ চাকুরির পরিক্ষায় ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ৪৩তম বিসিএসে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) তাঁকে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করেছে।
সফলতা নিয়ে মিহির বলেন, ‘শত বাধা পেরিয়ে আমাকে এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে। তবে কখনো হাল ছাড়িনি। আমি এমন একটা গ্রাম থেকে উঠে এসেছি যেখানে ছেলেমেয়েদের নাম লেখা শেখার পরে স্বপ্নই থাকত বিদেশ চলে যাবে। এরকম একটা পরিবেশে আমি স্বপ্ন দেখতাম একদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করব। তবে কখনো ভাবিনি বিসিএসের মতো এত প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটা পরীক্ষা দিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণির একটা চাকরি করব।’
‘জীবনে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে আল্লাহর অশেষ রহমতে আজকে আমি ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। আশা করি নিজের উপর অর্পিত সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দেশের মানুষের সেবা দিতে পারব।’
ভবিষ্যৎ বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে মিহির বলেন, ‘বিসিএস ক্যাডার হওয়া যতটা না কষ্টের তার থেকে বেশি কষ্টসাধ্য কাজ হচ্ছে লেগে থাকা। তাই ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।’
ওআ/