মস্কোতে ওয়াগনার গোষ্ঠীর সিনিয়র সাবেক কমান্ডার আন্দ্রেই ট্রোশেভ ও উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউনুস-বেক ইয়েভকুরভের সাথে বৈঠক করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত
ইউক্রেনে রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক কমান্ডার আন্দ্রেই ট্রোশেভ। তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সাবেক প্রধান প্রয়াত ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের সাবেক সহযোগী। প্রিগোজিন বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হওয়ার এক মাস পর ওয়াগনারের নতুন প্রধান নিয়োগ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এদিকে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার হয়ে আবারও যুদ্ধ করছে ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার। দেশটির দনবাসে তাদের যুদ্ধ করতে দেখা যাচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন ইউক্রেনের এক সামরিক কর্মকর্তা।
গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোকে এক সাক্ষাতকারে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনীর কৌশলগত যোগাযোগ বিভাগের উপপ্রধান সেরহি শেরেভাতি বলেন, কয়েকশ ওয়াগনার সেনাকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধ করতে দেখা গেছে।
ওয়াগনার সদস্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের লুকাচ্ছে না বলেও দাবি করেন শেরেভাতি। তিনি বলেন, তারা আমাদের সেনাদের ভয় দেখাবে এবং এ থেকে আরও একটি বিষয় প্রমাণিত হয় তারা আরও রক্তলোলুপ হয়ে উঠেছে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ওয়াগনারের যেসব সেনা বেশি ভাগ্যবান, তাদের আফ্রিকায় পাঠানো হয়েছে। কারণ সেখানে টাকার পরিমাণও বেশি। আর তুলনামূলক কম ভাগ্যবানদের আবারো ইউক্রেনে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
শেরেভাতি বলেন, আমাদের যোগাযোগ বিভাগ ও গোয়েন্দা ইউনিট নিশ্চিত করেছে দনবাসের রণক্ষেত্রে আবারও ফিরে এসেছে ওয়াগনার।
রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, ওয়াগনার বাহিনীকে ইউক্রেনে কিভাবে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় সেই পরিকল্পনা করছেন পুতিন। সেই লক্ষ্যেই শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ওয়াগনার বাহিনীর অন্যতম সিনিয়র কমান্ডার আন্দ্রেই ট্রোশেভের সাথে বৈঠক করেন তিনি।
প্রিগোজিনের ব্যর্থ বিদ্রোহের পর ওয়াগনার গোষ্ঠীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন পুতিন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভাড়াটে গোষ্ঠীটি যে এখন নিয়ন্ত্রণেই আছে বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কমান্ডারের সঙ্গে এই বৈঠকের মাধ্যমে সেটাই দেখাতে চেয়েছেন ক্রেমলিন।
সাবেক ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন পুতিনের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটিতে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছিল ওয়াগনার সেনারা। তবে রুশ সামরিক নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ ছিল প্রিগোজিনের। এ অসন্তোষের প্রকাশ ঘটে গত ২৩ জুন। বিদ্রোহ করে বসেন প্রিগোজিন।
রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের জন্য ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মস্কোর দিকে অভিযান শুরু করেন তিনি। পথে কয়েকটি শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন ওয়াগনারের যোদ্ধারা। ওয়াগনারের নিয়ন্ত্রণে যায় গুরুত্বপূর্ণ একটি রুশ সেনাঘাঁটি।
প্রিগোজিনের বিদ্রোহের জেরে পুতিন সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। পরবর্তী সময়ে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেন প্রিগোজিন। সমঝোতায় বলা হয়, প্রিগোজিনসহ ওয়াগনার সেনারা রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যাবেন।
বিদ্রোহের পর ওয়াগনার সেনারা বেলারুশে চলে যান। তবে ওয়াগনারপ্রধান প্রিগোজিনের অবস্থান নিয়ে জল্পনাকল্পনা রয়ে যায়। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, তিনি বেলারুশে আছেন।
এমনকি তার রাশিয়া সফর এবং পুতিনের সঙ্গে দেখা করার খবরও জানা যায়। কিন্তু কখনোই প্রকাশ্যে আসেননি তিনি। এরপর গত মাসে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর অদূরে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন প্রিগোজিন।
এসকে/
খবরটি শেয়ার করুন