শনিবার, ২রা আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** মালিক-ডি ভিলিয়ার্সদের ফাইনাল আজ, খেলা দেখবেন কোথায় *** আমেরিকার বাজারে শুল্ক কমেছে, বাংলাদেশে স্বস্তি *** ফল দেখলেই বুঝবেন, কাজটা ঠিক হয়েছে কী না: খলিলুর রহমান *** ইনার হুইল ক্লাবের উদ্যোগে দরিদ্র ছাত্রীদের জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে টিকা দান *** চোরা শিকার রুখতে গন্ডারের শিংয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ! *** দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না *** বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করল আমেরিকা *** জিম্বাবুয়েকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে বাংলাদেশ *** মেসির কারণেই সেদিন চুপ ছিলেন উরুগুয়ের ফুটবলার *** সাংবাদিক হত্যা মামলার আসামি চেয়ারম্যান পদ ফিরে পাওয়ায় বকশীগঞ্জে বিক্ষোভ

বঙ্গবন্ধু আছেন বাংলাদেশের অস্তিত্ব জুড়ে

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৮:২১ অপরাহ্ন, ১৪ই আগস্ট ২০২৩

#

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

তাপস হালদার

শোকাবহ ১৫ আগস্ট মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বিশ্বমানবতার শত্রু সেনাবাহিনীর কিছু উচ্ছৃঙ্খল ঘাতকের হাতে সপরিবারে নিহত হন বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, ইতিহাসের মহানায়ক, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি শেখ মুজিবকে হত্যা নয়, হত্যা করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে, বাংলাদেশের অস্তিত্বকে। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল হত্যাকারীরা। এজন্যই পরিবারের নারী-শিশু কেউই হত্যাকারীদের হাত থেকে মুক্তি পাননি।

বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতা শুধুমাত্র বাঙালিদের মধ্যে কেন, সারা বিশ্বেই খুব বেশি নেই। তিনি বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের শুধু স্বপ্নই দেখেননি, বছরের পর বছর লড়াই সংগ্রাম করে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু কোনো বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারেনি। দুঃসহ সময়ে যখন মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি; তখন কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীরা তাঁদের ভাষায় প্রতিবাদ করেছেন। কবি নির্মলেন্দু গুন লিখেছিলেন বিখ্যাত কবিতা ‘---শেষরাতে দেখা একটি সাহসী স্বপ্ন গতকাল/আমাকে বলেছে আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।/আমি তার কথা বলতে এসেছি।---আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’।

শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলি গেয়েছেন, ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরেনাই। যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই! তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।’ এই গানটি শুনলে গা শিউরে ওঠে, চোখের পাতা ভিজে যায়, তবুও হাজার হাজার বার শুনতে ইচ্ছে করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাঙালি গীতিকার হাসান মতিউর রহমান এই গানটি লিখেছিলেন। পরবর্তীতে গানটিতে আরো বৈচিত্র্য আনতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পরামর্শে ১৯৯৭ সালে গানটিতে কন্ঠ দেন সাবিনা ইয়াসমিন। আজ তাঁর কন্ঠে কোটি কোটি মানুষ গানটি শুনতে পাচ্ছে।

শত শত বছর পরে কোনো একটা জাতিকে মুক্ত করতে একজন মহামানবের আবির্ভাব ঘটে। ভাগ্য বিড়ম্বিত বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন মহামানব, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের মহানায়ক, ইতিহাসের স্রষ্টা। ভারতের খ্যাতিমান লেখক নিরঞ্জন মজুমদার ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’  শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘দেশে দেশে অনেক নেতা জন্মায়। কেউ ইতিহাসের একটি পঙতি, কেউ একটি পাতা, কেউ একটি অধ্যায় আবার কেউ বা সমগ্র ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সমগ্র ইতিহাস।’

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলে বাঙালিরা যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য শুরু থেকে পাকিস্তানি শাসকরা পরিকল্পিতভাবে অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতন শুরু করে। শুরু থেকেই পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে একজনই দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয়দফা এবং ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসনের পুরো ২৪ বছর ধারাবাহিক সংগ্রাম করে তিনি বাঙালিদের একমাত্র নেতায় পরিণত হন। তারপর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকা স্বত্বেও তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিকামী মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।মাত্র নয় মাসের মুক্তিসংগ্রামে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীরের বেশে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দায়িত্ব নেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের। মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের নেতা হয়ে উঠেন। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশকে পুনর্গঠন করতে নিয়েছিলেন অনেক জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন প্রকল্প। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে উপহার দিয়েছিলেন একটি সংবিধান, যার ভিত্তি ছিল জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

হাজার বছরের নির্যাতিত নিপীড়িত পরাধীন বাঙালিকে স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশাল হৃদয় আর অসীম সাহস নিয়ে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করে মৃত্যুঝুঁকিকে তুচ্ছ করে পাকিস্তানি জালেমদের হাত থেকে বাঙালিদের মুক্ত করেছিলেন। আমরা খুব বড় অভাগা জাতি। যে নেতা তাঁর জীবনের সব কিছু বিসর্জন দিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন, সেই নেতাকে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই সপরিবারে হত্যা করা হলো। যে পাকিস্তানিরা তাঁকে হত্যা করতে সাহস করেনি, সেখানে স্বাধীন দেশে হত্যা করে বাঙালি নামধারী কিছু কুলাঙ্গার দুর্বৃত্ত। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে কোনো বাঙালি হত্যা করতে পারে, তা তিনি নিজেও বিশ্বাস করতেন না।কিন্তু সেই কাজটিই করলো কিছু মানুষরূপী হায়নারা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর এদেশে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায়নি। যত দিন যাচ্ছে ততই তিনি আরো আলোকিত হচ্ছেন। যতদিন পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু থাকবেন।

দ্য টাইমস অব লন্ডন ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছিল, সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে।কারণ তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। বাস্তবেও তাই। বঙ্গবন্ধু আছেন বাংলাদেশের পুরো অস্তিত্ব জুড়ে। যতই দিন যাচ্ছে, সেটি আরো বেশি করে দিবালোকের মত স্পষ্ট হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে শারিরীকভাবে হত্যা করা হলেও, তাঁর আদর্শকে হত্যা করা যায়নি। আদর্শের কখনো মৃত্যু হয় না। আজ কোটি কোটি বাঙালি জাতির পিতার আদর্শকে বহন করে চলছে। আর সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মহাপ্রয়াণ দিবসে স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ। 

ইমেইল: haldertapas80@gmail. 



তাপস হালদার বঙ্গবন্ধু আছেন বাংলাদেশের অস্তিত্ব জুড়ে

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন