ছবি: সংগৃহীত
কিশোরগঞ্জের ভৈরব মোকামে ৪ দিনের ব্যবধানে মোটা ধানের (হিরা জাত) দাম মণপ্রতি ৫০ টাকা কমেছে। গত মঙ্গলবার এই মোকামে মোটা ধান সর্বোচ্চ ৭২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। চার দিন আগে দর ছিল মণপ্রতি সর্বনিম্ন ৭৭০ টাকা। দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকেরা। অনেকে ভৈরব মোকামে ধান পাঠানো বন্ধ রেখেছেন। তবে ব্রি-২৯ ধানের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রি-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা মণ দরে।
দুই সপ্তাহ আগে থেকে ভৈরব মোকামে বিক্রির জন্য মোটা ধান আসতে শুরু করে। এসব ধানের বেশির ভাগ আসছে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর থেকে। আজমিরীগঞ্জ থেকে ভৈরব মোকামের নদী পথের দূরত্ব পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার।
আজমিরীগঞ্জের হাওরের কৃষক জয়নাল মিয়া (৬৫)। তিনি এবার এক একর জমিতে ব্রি-২৮ আর তিন একর জমিতে মোটা ধানের আবাদ করেন। চিটার কারণে ব্রি-২৮ ধানের ফলন হয়নি। তবে মোটা ধানের ফলন বেশ ভালো। এক সপ্তাহ আগে এই মোকামে ধান বিক্রি করে তিনি লাভবান হয়েছিলেন। আরও ধান পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যে তিনি জানতে পারেন, ভৈরব মোকামে ধানের দাম কমছে। ফলে তিনি ধান পাঠানো বন্ধ রেখেছেন। মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তিনি আশা করেছিলেন ঈদের পর বাজার চাঙা হবে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম কমেছে। এত দূর থেকে খরচ করে ভৈরব মোকামে ধান পাঠালে লাভের কোনো সুযোগ নেই।
ব্যবসায়ীরা বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, হবিগঞ্জের দিরাই, লাখাই, আজমিরীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের কিছু অংশের বাণিজ্য ভৈরবনির্ভর। নদীপথে ভৈরবের সঙ্গে ওই সব অঞ্চলের অর্থনৈতিক যোগসূত্র তৈরি হয়ে আছে। সড়ক যোগাযোগ ভালো হওয়ার পর ওই সব অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য কমে এলেও শেষ হয়ে যায়নি। বিশেষ করে হাওরকে ঘিরে ভৈরবে সমৃদ্ধ ধানের মোকাম প্রতিষ্ঠা হয়। সময়ের ব্যবধানে ভৈরব মোকামের জৌলুশ কিছুটা কমে যায়।
আরো পড়ুন: রংপুর অঞ্চলে ৩৩ লাখ টন বোরো ধান উৎপাদনের আশা
তারপরও কিছু অংশের উৎপাদিত ধান ভৈরব মোকামের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। এই মোকাম থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, লালমনিরহাট, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও কুমিল্লার ব্যবসায়ী ও মিলাররা ধান কেনেন।
গত সোমবার দুপুরে ভৈরব মোকামে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে ধানবোঝাই দুটি নৌকা। নৌকা দুটি এসেছে আজমিরীগঞ্জ থেকে। ক্রেতা কম, বিক্রিও কম। বিক্রি কম হওয়ায় ঘাটে মজুত বাড়ছে।
ধানবোঝাই নৌকার মধ্যে কাজল মাঝির নৌকা একটি। আজমিরীগঞ্জ থেকে তাঁর নৌকায় করে আনা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ মণ মোটা ধান। দাম কমের দিকে থাকায় ব্যাপারী ও কৃষকদের মন খারাপ। একই এলাকা থেকে দুই হাজার মণ ধান নিয়ে আসা আপেল মাঝিও একই ধরনের কথা বললেন।
ধান ও চালের আড়তদারি প্রতিষ্ঠান হেলাল ট্রেডার্সের মালিক হেলাল মিয়া মোকামে দাঁড়িয়ে কেনাবেচা করছিলেন। তিনি বলেন, শুরুর দিকে দামটা ভালোই ছিল। কেনাবেচা দুই-ই সমানতালে এগোচ্ছিল। দাম কমার কারণে কেনা ও বেচা উভয়ই কমেছে। কেন কমছে, জানতে চাইলে তিনি সঠিক কারণ বলতে পারেননি। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দাম না বাড়লে ভৈরব মোকামে ধান নিয়ে আসা কমে যাবে বলে তাঁর ধারণা।
এমএইচডি/ আইকেজে
খবরটি শেয়ার করুন