ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (১৫ই মে) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন দু'দিনের বাংলাদেশ সফরে আসা আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান এফেয়ার্স ব্যুরোর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু । ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা উইংয়ের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সফররত দলের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তার চিঠিতে দু'দেশের সম্পর্ককে উচ্চতর ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছেন।
আরো পড়ুন: আস্থার জায়গা পুনর্নির্মাণ করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ডোনাল্ড লু
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। আমাদের বহুমাত্রিক সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে। একইসাথে গত ৫৩ বছরের আমাদের অভিযাত্রায় আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সফরে আসা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু'কে ধন্যবাদ জানিয়েছি।'
বাণিজ্য-বিনিয়োগ
বাণিজ্য-বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান বলেন, একক দেশ হিসেবে আমাদের রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য আমেরিকা । বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশও আমেরিকা। বাংলাদেশে নির্মিয়মাণ ৪০টি আইটি ভিলেজে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ডোনাল্ড লু-কে অনুরোধ জানিয়েছি, কিছু বিনিয়োগ তারা এরইমধ্যে করেছে।
তিনি বলেন, ডোনাল্ড লু' বলেছেন আমাদের ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করার জন্য আগে যে 'জিএসপি' সুবিধা আমরা আগে পেতাম এখন পাই না, সেটি তারা ফিরিয়ে দিতে চায়। সেজন্য আমাদের লেবার পলিসিটা একটু রিভিউ করতে হবে, যেটি আমরা রিভিউ করছি। সেটি নিয়ে মঙ্গলবার আইনমন্ত্রীর সাথে তার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ডোনাল্ড লু জানিয়েছেন, আমেরিকা আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ শক্তিশালী করার জন্য তাদের ডিভালপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে বাংলাদেশকে অর্থায়ন করতে চায়। একই সাথে আমাদের ট্যাক্স সিস্টেমকে আধুনিক করার জন্য আমাদের সহায়তা করতে চায়। ট্যাক্স ফাঁকি রোধে ট্যাক্স কালেকশনের ক্ষেত্রে তারা আমাদের সহায়তা করতে চায়।
এলডিসি বা নিম্ন থেকে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাতেও তাদের সহায়তা চেয়েছি। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক বিস্তৃত করার জন্য তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো প্রসংগ
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমি আলোচনা করেছি। তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি মার্কিন বিচার বিভাগের আওতাভুক্ত। সেখানে আমেরিকার অন্য বিভাগগুলোর হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। কিন্তু তাদের বিচার বিভাগের সাথে বাংলাদেশ দূতাবাসের যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিচার বিভাগের সম্মতি আনয়নের কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও ত্রাণ
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের পরই সবচেয়ে বেশি ত্রাণ সহায়তা দেওয়ায় আমেরিকাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি উল্লেখ করেন মন্ত্রী। লু জানিয়েছেন, তিনি এই সহায়তা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আমেরিকাকে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
প্যালেস্টাইন প্রসংগ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজায় শান্তি স্থাপন করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি। ডেনাল্ড লু বলেছেন- 'মার্কিন সরকার, সেক্রেটারি অব স্টেট মিস্টার ব্লিঙ্কেন অক্লান্তভাবে কাজ করছে যাতে গাজায় যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়'। এবং তিনি আমাকে যেটুকু বলেছেন- 'আমরা আশাবাদী'। আমরা বলেছি গাজায় যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে, নিরীহ শিশুদের, নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। এটি আসলে মেনে নেয়া যায় না। আমি বলেছি টেলিভিশনে যখন এগুলো দেখি তখন টেলিভিশন দেখা কন্টিনিউ করতে পারি না। সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার। তিনিও একমত যে সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার।
শিক্ষা ও অন্যান্য
ড. হাছান বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যাতে আরো ব্যাপকভাবে আমেরিকা যায়, ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারে সে বিষয়ে আমেরিকা আমাদের সহায়তা করতে চায়। আমি প্রস্তাব দিয়েছি যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে যেন তাদের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু করা হয়।
মন্ত্রী আরও জানান, তারা নারী ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু ইস্যুতেও সহায়তাদানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। ভিসানীতি নিয়ে প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, 'ইউএস ভিসা পলিসি ইজ ডরম্যান্ট নাউ'। সুতরাং এটি নিয়ে আলোচনা হয়নি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ডোনাল্ড লু
হাছান মাহমুদের সাথে বৈঠক শেষে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দু’দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী। কীভাবে দু’দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়, আমরা সে বিষয়গুলোতে আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে দুই দিনের সফরে আমেরিকা ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ও আস্থা নতুন করে তৈরি করতে এসেছি।'
'বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা পরস্পর নতুন বিনিয়োগ, আমেরিকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ছাড়াও কীভাবে বাংলাদেশ ও আমেরিকা যৌথভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা এবং এদেশে শ্রম আইনকে আরও উন্নত করার বিষয়েও আলোচনা করেছি' উল্লেখ করেন তিনি।
এইচআ/এনএম/