ছবি: সংগৃহীত
রুপালি ঝাড়বাতি, আকাশি রঙের সোফা, আর কোণে পিতলের পাত্রে ফুটছে জাফরান ও এলাচের ঘ্রাণে ভরা আরবের ঐতিহ্যবাহী কফি ‘গাহওয়া’। এটি এক অনন্য সৌদি অভ্যর্থনা। সামনে রাখা রয়েছে তাজা খেজুর ও মিষ্টি বাসবুসা। রিয়াদের আল ইয়াসমিন এলাকার এক মনোরম বাড়িতে এক সন্ধ্যায় অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছেন ফাতিমা অলিয়ান।
সোনালি নকশা করা সাদা আবায়া পরা অলিয়ান এখন রিয়াদের সেই সব গৃহিণীদের একজন, যারা ‘হাইহোম’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজেদের ঘর খুলে দিয়েছেন বিদেশি পর্যটক ও প্রবাসীদের জন্য।
সৌদিদের নতুন এই প্রবণতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে সৌদি উদ্যোক্তা নৌরাহ আলসাদুন এই ‘হাইহোম’ প্ল্যাটফর্মটি চালু করেছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল সৌদি সংস্কৃতির ঐশ্বর্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া।
তিনি বলেন, ‘ভ্রমণের সময় আমার সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতাগুলো ছিল মানুষের ঘরে—খাবার ভাগ করে নেওয়া, গল্প বলা, তাদের ঐতিহ্য জানা। তাই চেয়েছি আমাদের সংস্কৃতিও সেইভাবেই পৌঁছে যাক অতিথিদের কাছে।’
বর্তমানে হাইহোম প্ল্যাটফর্মটি সৌদি আরবের ২৪টি শহরে পর্যটকদের দুই শতাধিক অভিজ্ঞতা অফার করছে। সৌদি আরবের কয়েক শ পরিবার এই আতিথেয়তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ঘরোয়া এই ভ্রমণ-আড্ডাগুলো সাধারণত দুই-তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
অতিথিরা স্থানীয় ঘরবাড়ি ঘুরে দেখেন, সৌদি খাবার রান্না শেখেন, ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন, স্থানীয় শিল্পকলা দেখেন এবং সৌদি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।
রিয়াদের আল ইয়াসমিন এলাকার ফাতিমা অলিয়ানের বাড়িটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। সেখানে আছে নাজদি ও আসিরি শিল্পকর্ম, প্রাচীন রুপার বাতি, আরবিয় কফি সেট, আর বেদুইন গয়না। তিনি আনন্দের সঙ্গে তার সংগ্রহ দেখান অতিথিদের এবং নিজেদের গল্প বলেন।
সৌদি আরবে এমন ট্যুরের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এমনকি বিদেশি অতিথিরা অংশ নিচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী দরজার নকশা আঁকা ও ‘আল-কাত আল-আসিরি’ চিত্রকর্ম তৈরির ওয়ার্কশপে। আবার স্থানীয় পরিবারের সঙ্গে একত্রে রান্না করা ও খাবার ভাগ করে নেওয়ার দারুণ অভিজ্ঞতাও পাচ্ছেন তারা।
অলিয়ানের অতিথিরাও শেষে উপভোগ করেন ঐতিহ্যবাহী সৌদি খাবার—ডাল স্যুপ, সালাদ, ওয়ারাক এনাব, চিকেন মান্দি, আলু সুফলে, ঠান্ডা পানীয় ও মিষ্টান্ন। তিনি কিছু খাবার প্যাক করেও দেন অতিথিদের জন্য।
অলিয়ানের বাড়ি ঘুরে আসা ভারতীয় সুমায়া গায়ত্রীর ভাষায়—‘শুধু খাবার বা সাজসজ্জা নয়, সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে আছে অলিয়ানের উষ্ণতা আর অতিথিপরায়ণতা। তার ঘরে বসে গাহওয়ার কাপে গল্পের ফুল ফোটানোই যেন সৌদি সংস্কৃতির আসল প্রতিচ্ছবি।’
হাইহোম প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা নৌরাহ আলসাদুন বলেন, ‘এখানে কিছুই সাজানো নয়—এটাই আমাদের প্রকৃত সৌদি জীবন।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন