ছবি: সংগৃহীত
গ্রামের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই শোনা যায় ঠুকঠাক শব্দ। একটি-দুটি নয়, ঘরে ঘরে এ শব্দ। সূর্য ওঠার আগেই কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়েন নৌকা তৈরির কাজে। বছরের ১২ মাসই থাকে এ ব্যস্ততা। বরগুনার আমতলীর কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব চুনাখালী গ্রামজুড়ে হাতুড়ি-বাটালের এ শৈল্পিক ছন্দে যে কারও মন ভরে যাবে।
চুনাখালী গ্রামে ৯ শতাধিক পরিবারের বসবাস। ২০০ বছর ধরে বংশপরম্পরায় নৌকা তৈরির পেশাটি ধরে রেখেছে আড়াই শতাধিক পরিবার। বছরে প্রায় দুই কোটি টাকার নৌকা তৈরি হয় এ গ্রামে। এ কারণে গ্রামটি সবার কাছে নৌকা তৈরির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহম্মেদ মাসুম তালুকদার বলেন, এ গ্রামে নৌকা তৈরির ঐতিহ্য সুদীর্ঘকালের। দূরদূরান্তের মানুষ এই গ্রামকে নৌকা গ্রাম হিসেবে চেনে। ক্রেতাদের আনাগোনায় স্থানীয় দোকানিদের চা, পান-সিগারেট বেচাবিক্রি বাড়ে। মোট কথা, এ পেশা ঘিরে অর্থনৈতিকভাবেও এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামটি।
সরেজমিন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় পলিথিন, ছাপরা বা টিন দিয়ে ঘর বানানো হয়েছে। কারিগররা জানান, দুজন কারিগর প্রতিদিন গড়ে একটি করে নৌকা তৈরি করতে পারেন। প্রত্যেকে মজুরি পান ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এখানকার তৈরি নৌকাকে ডিঙি বলে। সহজেই অল্প পানিতে চলাচল করতে পারে। ক্ষেত থেকে কাটা ধান, হালের লাঙল-জোয়াল হাটবাজারে এ নৌকায় পরিবহন করা যায়। তাই এর চাহিদা বেশি।
কথা হয় গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি বারেক মিস্ত্রির সঙ্গে। ৫০ বছর ধরে নৌকা তৈরি করছেন। তার বাবা-দাদাও এ কাজ করেছেন। এখন তার ছেলে রাসেলও এ পেশায় যুক্ত হয়েছেন।
বারেক মিস্ত্রি জানান, প্রায় ২০০ বছর আগে এই গ্রামে লালু মিস্ত্রি নামে এক ব্যক্তি ছিলেন। তার হাত ধরে নৌকা তৈরি শুরু হয়। ধীরে ধীরে গ্রামের অন্য পরিবারগুলো তার কাছ থেকে এ কাজ রপ্ত করে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন