ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
আলোচিত গরুর মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব জানায়, ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই খলিলের কাছে চাঁদা দাবি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। তবে এর সঙ্গে মাংস বিক্রেতাদের কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রোববার (২৮শে জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, সম্প্রতি কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী অন্যায়ভাবে গরুর মাংসের মূল্যবৃদ্ধি করে মাংসের বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে গত ১৯শে নভেম্বর থেকে রাজধানীর শাজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল তার ‘খলিল গোস্ত বিতানে’ ৫৯৫ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন, যা ব্যাপক সাড়া ফেলে।
এরপর থেকে খলিলের দেখাদেখি আরো কিছু মাংস ব্যবসায়ী প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি করে আসছেন। পরবর্তীতে গত ২২শে ডিসেম্বর ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সিদ্ধান্তে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসে।
এ সময় যেসব মাংস ব্যবসায়ী ন্যায্যমূল্যে মাংস বিক্রি করেন, মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন। এছাড়াও কিছুদিন আগে রাজশাহীর বাঘার আড়ানী হাটে ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করায় একজন মাংস ব্যবসায়ী খুন হন।
কমান্ডার মঈন বলেন, গত ১৮ই জানুয়ারি আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের মোবাইলে একটি নম্বর থেকে কল করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে ও তার ছেলেকে দুই দিনের মধ্যে গুলি করে হত্যার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করা হয়। এছাড়া, খলিল এবং তার ছেলেকে হত্যার জন্য গুলি ও পিস্তল রেডি করা হয়েছে জানিয়ে তার মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা এবং মাথা ছাড়া লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
এরপর মাংস ব্যবসায়ী খলিল ২০শে জানুয়ারি রাজধানীর শাহাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৮১৩) করেন। এ ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় আশুলিয়া থেকে খলিলকে হুমকি দেওয়া এবং এর নির্দেশদাতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট লাইনের ব্যবসা করে আসছেন। এলাকায় তার প্রায় ৫০০ ডিস এবং ইন্টারনেট লাইনের সংযোগ রয়েছে। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল। বিরোধের জেরে কিছুদিন আগে প্রতিপক্ষের সঙ্গে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় তার ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
পরে একজন তাকে আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়ে তাকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দিতে বলেন। যার বিনিময়ে তিনি তার ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায় কোনো প্রতিবন্ধকতা বা কোনো বাধার সম্মুখীন হবেন না বলে জানান।
ব্যবসায়িক সুবিধার লক্ষ্যে নুরুল হক গত ১৮ই জানুয়ারি মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে কল করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে হত্যার হুমকি দেন। হুমকির সময় চাঁদা দাবির পাশাপাশি তার ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ সেলিমের নাম উল্লেখ করেন। একই দিনে নুরুল গ্রেপ্তার ইমনকে একটি ফোন কল ধরিয়ে দিয়ে মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে গালাগালি করতে বলেন।
ইমনও নুরুলের কথামতো খলিলকে কল দিয়ে গালাগালি করতে থাকেন এবং তাকে দুই দিনের মধ্যে হত্যার জন্য গুলি ও পিস্তল রেডি করে রেখেছেন বলে জানান। এছাড়াও খলিলের মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা এবং মাথা কাটা লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখান। পরে হুমকি দেওয়া মোবাইল ফোন ও সিম কার্ডটি পানিতে ফেলে দেন ইমন।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার নুরুল হক ঢাকার আশুলিয়া এলাকার ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসার পাশাপাশি কৃষি কাজ করতেন। এলাকায় বিভিন্ন জনকে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের দায়ে আশুলিয়া থানায় তার নামে অন্তত ৪টি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার ইমন দীর্ঘদিন ধরে নুরুলের ডিসের ব্যবসার কাজে সহায়তা করে আসছেন। এছাড়াও তিনি নুরুলের সঙ্গে এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, নুরুলের সঙ্গে স্থানীয় কিছু মাংস ব্যবসায়ীদের পরিচয় রয়েছে। তাদের বিষয়েও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। খলিলকে হুমকি দেওয়ার পেছনে শুধুই নুরুলের প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো নাকি মাংস ব্যবসায়ীদের কোনো যোগসাজশ রয়েছে, এটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এইচআ/ আই.কে.জে/