ছবি: সংগৃহীত
২০২৪ সালের ৫ই আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি বা তার পরিবারের কেউ আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নাও থাকতে পারেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা।
সেখান থেকে রয়টার্সকে আজ বুধবার (২৯শে অক্টোবর) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটা জানান। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৪ মাসের বেশি সময়ের পর এটিই তার প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার।
এতে শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি এর সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন—তিনি শুধু ‘বৈধ’ সরকারের অধীনে দেশে ফিরতে চান। জুলাইয়ের অভ্যুত্থান, সহিংস দমন-পীড়ন ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুমসহ একাধিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলছে।
বর্তমান বাস্তবতায় শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেওয়া হলে তা বৈধতা বা নৈতিকতার দিক থেকে সঠিক হবে কিনা, তা নিয়ে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের একটি বক্তব্য ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই রয়টার্স তার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি সাক্ষাৎকার দিতে চান, সেক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলেও তা নেবেন বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেবেন মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন দর্শকপ্রিয় এই উপস্থাপক। তার বক্তব্য ঘিরে এখনো নানামুখী আলোচনা চলছে।
বর্তমানে তার দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেশে নিষিদ্ধ। শেখ হাসিনা রয়টার্সকে বলেন, 'এটা আমি বা আমার পরিবারের ব্যাপার নয়। বাংলাদেশ যে ভবিষ্যৎ চায়, তা অর্জন করতে হলে সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেই হবে। কোনো একক ব্যক্তি বা পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।'
তবে তার এই বক্তব্য তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আগের মন্তব্যের সঙ্গে কিছুটা ভিন্ন। আমেরিকার ওয়াশিংটনে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ জয় গত বছর রয়টার্সকে বলেছিলেন, অনুরোধ এলে তিনি আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
রয়টার্স আজ লিখেছে, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশ পরিচালনা করছে এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছে। দেশে বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ।
শেখ হাসিনা রয়টার্সকে আরও জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কোনো সরকারের অধীনে তিনি দেশে ফিরবেন না এবং আপাতত ভারতে থাকার পরিকল্পনা নিয়েছেন।
ই-মেইলে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা কেবল অন্যায়ই নয়, এটি আত্মঘাতীও বটে।' দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'আমি দেশে ফিরতে চাই, তবে শর্ত একটাই—সেখানে বৈধ সরকার থাকতে হবে, সংবিধান অটুট থাকতে হবে এবং প্রকৃত আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।'
উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানে সহিংস দমন-পীড়ন ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলমান। এর আগে ট্রাইব্যুনাল গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো 'বিদ্বেষমূলক বক্তব্য' প্রকাশ বা প্রচার নিষিদ্ধ করে।
এদিকে লন্ডনের ইন্ডিপেন্ডেন্টকে আলাদাভাবে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে বিক্ষোভের সময় নিহতদের বিষয়ে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ওই সময়ের ‘জুলাই গণহত্যা’র ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলমান। তাকে দেশে ফেরত দিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শেখ হাসিনাকে আদালতে হাজির হতে ইতিমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়েছে।
খবরটি শেয়ার করুন