ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় রক্ষণশীল ইনফ্লুয়েন্সার চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডের পর অনলাইনে প্রতিশোধের ডাক দিয়েছে ডানপন্থীরা। কার্কের মৃত্যুকে ‘উদ্যাপন’ করা হয়েছে এমন মন্তব্যকারী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করছেন ডানপন্থী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অন্তত একজন কর্মকর্তা। এর ফলস্বরূপ, যারা এমন পোস্ট করেছেন, তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়া এই ‘নাম প্রকাশ ও লজ্জা দেওয়া’র প্রচারণার ফলে ইতিমধ্যে অসংখ্য মানুষ চাকরি হারিয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে। এতে করে অনলাইন জগতে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনৈতিক কর্মী চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডে গত বুধবার (১০ই সেপ্টেম্বর) বিকেলে ডানপন্থীরা শোকাহত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে। অনলাইনে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাদের বিশাল ফলোয়ার রয়েছে, প্রায় একই সুরে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করার আহ্বান জানান।
তাদের মধ্যে রয়েছেন উগ্র ডানপন্থী অ্যাকটিভিস্ট লরা লুমার এবং চিয়া রাইচিক, যিনি এক্স প্ল্যাটফর্মে ‘লিবস অব টিকটক’ নামের একটি বড় অ্যাকাউন্ট চালান। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তারা এবং অন্যান্য ডজনখানেক অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার সাধারণ আমেরিকানদের উৎসাহিত করছেন যাতে তারা চার্লি কার্ক সম্পর্কে করা আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য তাদের সহ-নাগরিকদের চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষকে জানান। যদিও এই ধরনের মন্তব্যের স্বাধীনতা আমেরিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনী দ্বারা সুরক্ষিত।
অনলাইনে এই পরিচয় প্রকাশের ঘটনা ঘটলেও এর বাস্তব পরিণতি পরিলক্ষিত হতে শুরু করেছে। সিক্রেট সার্ভিসের একজন মুখপাত্র অ্যান্টনি গুগলিয়েলমি জানান, একজন সিক্রেট সার্ভিসের কর্মীকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে কারণ তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, চার্লি কার্ক ‘তার শো-তে ঘৃণা ও বর্ণবাদ ছড়িয়েছেন।’
ফ্লোরিডা এবং ওকলাহোমার শিক্ষা বিভাগের প্রধানেরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং শাস্তির হুমকি দিয়ে বিবৃতি জারি করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের পক্ষে যারা ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন তাদের সতর্ক করা হয়েছে। টেক্সাস এবং আইওয়ার কিছু শিক্ষককে ইতিমধ্যে বরখাস্ত বা ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী মাইকেল ম্যান চার্লি কার্ককে ‘ট্রাম্পের হিটলার ইয়ুথের প্রধান’ উল্লেখ করে একটি বার্তা রিপোস্ট করার পর রাজ্যের রিপাবলিকান সিনেটর ডেভ ম্যাককোরমিক এটিকে ‘ঘৃণ্য’ বলে অভিহিত করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অবিলম্বে, সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ’ নিতে বলেন।
লুইজিয়ানার রিপাবলিকান প্রতিনিধি ক্লে হিগিন্স বলেন, তিনি ‘কংগ্রেসের ক্ষমতা’ ব্যবহার করে টেক কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করবেন যেন তারা চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডকে ছোট করে দেখা যে কোনো ব্যক্তিকে ‘আজীবন নিষিদ্ধ’ করে। একই ধরনের বার্তা প্রকাশ করেছেন নৌবাহিনীর সচিব জন সি. ফেলান এবং সশস্ত্র বাহিনীর অন্যান্য শাখার কর্মকর্তারাও।
নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিম ওয়েনিংগার, যিনি সামাজিক মাধ্যমে মানুষকে অমানবিক করা এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেন, এভাবে বিরোধী পক্ষকে লক্ষ্যবস্তু করার প্রচারণাটিকে অনলাইন বিতর্কে একটি নতুন দিক বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমেরিকার সামাজিক মাধ্যমে এমন কিছু আগে কখনো দেখিনি—এটি একটি অনন্য মুহূর্ত।’ তিনি এই শুদ্ধি অভিযানকে বিগত কয়েক বছরে অনলাইনে বেড়ে ওঠা সহিংস মন্তব্যের প্রতি এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এই প্রচারণার একটি কেন্দ্রে একটি ওয়েবসাইট। চার্লি কার্ক নিহত হওয়ার মাত্র তিন ঘণ্টা পর এই সাইট নিবন্ধিত হয়েছে। সাইটটিতে তথ্য জমা দেওয়ার জন্য একটি টিপ লাইন রয়েছে এবং এতে সেসব ব্যক্তির ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ই-মেইল ঠিকানা, বসবাসের স্থান এবং নিয়োগকর্তার নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
এই ব্যক্তিরা কার্কের মৃত্যু নিয়ে ব্যঙ্গ বা উল্লাস করেছেন। গতকাল শুক্রবার (১২ই সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত ৪১ জনের নাম ওই সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আমেরিকার ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ গত বৃহস্পতিবার (১১ই সেপ্টেম্বর) সকালে তার ২ লাখেরও বেশি ফলোয়ারকে ‘বিদেশিদের মধ্যে যারা সহিংসতা এবং ঘৃণার প্রশংসা করে’ তাদের সম্পর্কে তথ্য দিতে আহ্বান জানান।
অতীতে বামপন্থী কর্মীরাও অনলাইনে বর্ণবাদী বা সমকামী-বিরোধী মন্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করেছেন। ওই সময় এই ধরনের মন্তব্যকারীদের প্রকাশ্যে নিন্দা করা হয়। ডানপন্থী কর্মীরা তখন এই ধরনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সেগুলোকে ‘ক্যানসেল কালচারের’ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতেন।
তবে, এবারের এই ডানপন্থী প্রচারণা আগে থেকে কতটা সমন্বিত ছিল তা নির্ধারণ করা কঠিন। যারা এতে অংশ নিচ্ছেন, তারা এর ফলাফল ও প্রতিক্রিয়া বেশ উদ্যাপন করছেন।
যারা চার্লি কার্ক সম্পর্কে তাদের মন্তব্যের জন্য লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন, তারা বিভিন্ন পেশার মানুষ যেমন—আইন সংস্থা, মিডিয়া, সামরিক এবং সরকারি পরিষেবা। অন্তত আটটি অঙ্গরাজ্যের স্কুল জেলা কর্মকর্তা এবং রাজ্য সরকারের কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এক বা একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘অনুপযুক্ত’ মন্তব্যের বিষয়ে তদন্ত করবেন। ফ্লোরিডার শিক্ষা কমিশনার আনাস্তাসিওস কামুতসাস বলেন, কার্কের বিষয়ে ‘জঘন্য’ মন্তব্য পোস্ট করেছেন এমন প্রতিটি শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করবেন।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন