শুক্রবার, ১২ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৭শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** মেসির সঙ্গে ছবি তুলতে খরচ করতে হবে ১০ লাখ রুপি *** ৯ নারীসহ বিনা বিচারে আটক বম নাগরিকদের মুক্তিসহ তিন দাবি ১৩০ নাগরিকের *** ক্রীড়ায় আসিফ নজরুল, স্থানীয় সরকারে আদিলুর ও তথ্যে সৈয়দা রিজওয়ানা *** খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা জানালেন ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার *** গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে উদ্ধার *** তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা *** বিচার বিভাগের জন্য সুখবর *** অন্তর্বর্তী সরকারে 'অপমানিত' রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করতে চান *** ইতিহাসে প্রথম একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট *** নির্বাচন যত সহজ ভাবা হচ্ছে, তত সহজ হবে না: তারেক রহমান

‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ বনাম ‘আদিবাসী’ বিতর্কের সমাধান কোন পথে

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:২৮ অপরাহ্ন, ২২শে জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি - সংগৃহীত

সম্প্রতি মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি গ্রাফিতি বাদ দেয়াকে কেন্দ্র করে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সামনে আন্দোলনরত বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ‘আদিবাসী’ শব্দ সংক্রান্ত বিতর্কটি নতুন করে আবারও সামনে এসেছে। হামলাকারীরা নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ‘আদিবাসী’ পরিচয়কে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য  বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই এবং জাতিসংঘও তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

আক্ষরিক অর্থে আদিবাসী শব্দের অর্থ হলো ‘ভূমিপূত্র’। অর্থাৎ ভূমির আদি বাসিন্দা। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো সরকারই কখনো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের এই ভূমির আদি অধিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি ‘আদিবাসী’ শব্দটির অস্তিত্বই স্বীকার করেনি।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৩ (ক) অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

সংবিধানের কোথাও আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। এ ছাড়া সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনগণের যেকোনো অনগ্রসর অংশকে অগ্রসর করার নিমিত্তে, সুবিধা দেওয়ার নিমিত্তে রাষ্ট্র যেকোনো প্রকার বন্দোবস্ত নিতে পারবে এবং সংবিধানের অন্য কোনো ধারা সেটাকে বাধা দিতে পারবে না।’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) কনভেনশন-১০৭-এর অনুচ্ছেদ ১(খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ক্ষেত্রে রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনকালে এই দেশে কিংবা যে ভৌগোলিক ভূখণ্ডে দেশটি অবস্থিত সেখানে বসবাসকারী আদিবাসীদের উত্তরাধিকারী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ‘আদিবাসী’ বলে পরিগণিত এবং যারা, তাদের আইনসঙ্গত মর্যাদা নির্বিশেষ নিজেদের জাতীয় আচার ও কৃষ্টির পরিবর্তে ওই সময়কার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আচার ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করে।’ অন্যদিকে, ‘উপজাতি’ সম্পর্কে  উপ-অনুচ্ছেদ ১(ক) অংশে বলা হয়েছে- ‘স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বেলায়, যাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা জাতীয় জনসমষ্টির অন্যান্য অংশের চেয়ে কম অগ্রসর এবং যাদের মর্যাদা সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে তাদের নিজস্ব প্রথা কিংবা রীতি-নীতি অথবা বিশেষ আইন বা প্রবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।’ অর্থাৎ ‘আদিবাসী’ হলো ‘সান অব দি সয়েল’। আর ‘উপজাতি’ হলো প্রধান জাতির অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র জাতি।

প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর কেউই বাংলাদেশে স্মরণাতীত কাল থেকে বসবাস করছে না। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় সকল উপজাতি সম্প্রদায় প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার থেকে অষ্টাদশ (১৭২৭-১৭৩০) শতকের দিকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বসবাস শুরু করে, যা স্মরণাতীত কাল পূর্বে ঘটেনি। মাত্র কয়েকশ’ বছর আগে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। উপরন্তু, বাংলাদেশের এই উপজাতীয়/ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর আদি নিবাস ভারত ও মিয়ানমারেও তাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি অর্জনের নেপথ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে কথিত স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ দেশ গঠনের দুরভিসন্ধি রয়েছে। তাদের  অপতৎপরতা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর হুমকি হতে পারে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে  নতুন করে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কালে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি এবং যাদের ভাষায় লিখিত রূপ আছে- এমন ৫টি ভাষায় বই ছাপিয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৭ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠীসমূহে নিজ ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা কখনোই ভূমিপূত্র ছিল না। সুদীর্ঘকাল থেকে বাঙালিদেরও বসবাস আছে। যদি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আদিবাসী স্বীকৃতি দেয়া হয়, তাহলে সেখানে অস্থিরতা বাড়বে। তখন তারা বলার সুযোগ পাবে, এই ভূমি আমাদের তোমরা চলে যাও। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও সেখান থেকে চলে যেতে হবে। তখন সেখানে (পার্বত্য চট্টগ্রাম) স্বাধীনতার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম চলমান রয়েছে, সেটা আরো বেগবান হবে। বাংলাদেশের ওইসব এলাকার ভূ-রাজনীতির সংকট তৈরি হবে, তখন রাষ্ট্রীয় সংহতি বিপন্ন হবে। তাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী বলার বা স্বীকৃতি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।  

আই.কে.জে/

আদিবাসী

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250