ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের আগস্টে বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে চলছে টানাপোড়েন।
আর সম্প্রতি সম্মিলিত সনাতন জাগরনী মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার পর সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য নিজেদের পররাষ্ট্র সচিবকে ঢাকায় পাঠাচ্ছে ভারত।
বুধবার (৪ঠা ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত আগস্টে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিনিয়র কোনও ভারতীয় কর্মকর্তার ঢাকায় এটিই প্রথম সফর হতে চলেছে বলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, উভয় দেশের কেউই এখনও এই সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা দেয়নি। তবে বিক্রম মিসরি সম্ভবত আগামী ১০ই ডিসেম্বর পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসবেন। উভয় দেশের রাজধানীতে তথা ঢাকা ও দিল্লিতে বিক্রমের সফরের প্রস্তুতির বিষয়ে অবগত ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন।
ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরির এই সফরটি এমন এক সময়ে হতে চলেছে যখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক অভূতপূর্ব উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের অভিযোগে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কয়েকটি ভারতীয় রাজ্যে বিক্ষোভ হচ্ছে।
এছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলা-ভাঙচুর এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার দায়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মাকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায়।
আরও পড়ুন: ভারতে ৫.৩ মাত্রার ভূমিকম্প, ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, গত ২৩শে সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অবসরে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মধ্যে বৈঠকে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত লোকেরা জানিয়েছে। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার পর এবং আগস্টে ইউনূসের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর সেই সময়ে এটিই ছিল উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথম উচ্চ-পর্যায়ের কোনও মতবিনিময়।
ওপরে উদ্ধৃত ব্যক্তিদের একজন জানিয়েছেন, “বিষয়টি যেমন ঠিক হয়েছে, পররাষ্ট্র সচিবের আগামী ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। তবে সফরের আগে এখনও এক সপ্তাহ বাকি আছে এবং বর্তমান সম্পর্কের অবস্থা আমাদের দেখতে হবে।”
তিনি ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি নিয়ে ঢাকার অসন্তোষসহ বিভিন্ন কারণে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সৃষ্ট কূটনৈতিক উত্তেজনার কথা উল্লেখ করে এই কথা বলেন। মূলত বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হাসিনাকে ভারত থেকে প্রত্যর্পণের কথা বলেছেন ড. ইউনূস এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যান্য নেতারা।
এর আগে উভয় দেশের দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে সর্বশেষ সংলাপ ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে এবারের সংলাপে ভারত-অর্থায়নকৃত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু করা, ভিসা ব্যবস্থা সহজ করা, আরও সরাসরি ফ্লাইট চালু করা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মতো ইস্যু অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে বলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত লোকেরা জানিয়েছে।
ভারতের দ্বিতীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ এই সফরটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য আগ্রহী। কারণ ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সম্ভাব্য এই সফরকে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ শুরুর একটি সুযোগ হিসাবে দেখা হচ্ছে। সফর ঠিকঠাকভাবে এগিয়ে গেলে মিসরি ও ড. ইউনূসের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
এসি/কেবি
খবরটি শেয়ার করুন