ছবি: সংগৃহীত
শত বছরের বেশি সময় পেরিয়েছে যশোরের মধু মেলা। আধুনিক বাংলা কবিতার জনক, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে জমিদার বাড়ির মেলাঙ্গনে অন্যান্য বারের মতো এবারও বসেছে মধু মেলা।
এই মেলা দেখতে সাতক্ষীরা থেকে এসেছেন মিতালী রায় (৪৩)। সাধারণ মানুষের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ মেলাকে মহিমান্বিত করে বলে তার মত।
খুলনা বেতারের কণ্ঠশিল্পী অনিশা রায় (২২) বলেন, প্রতিবার তিনি মেলায় আসেন। সার্বিক পরিবেশ খুব ভালো। সব থেকে বড় ব্যাপার, নিরাপদে ঘুরে বেড়ানো যায়। প্রাণের মেলা উপভোগ করা যায়।
২৪শে জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ৩০শে জানুয়ারি পর্যন্ত। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় যশোরের জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মেলাটি হচ্ছে।
মধুমঞ্চে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক ও যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হচ্ছে। এ ছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, জাদু প্রদর্শনী, পুতুল নাচসহ হরেক আয়োজন। গ্রামীণ জনপদের নিত্যপ্রয়োজনীয় ধামা, কুলা, ঝুড়ি, দা, কাচি, বঁটি ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে।
পাওয়া যাচ্ছে শিশুদের জন্য কাঠের তৈরি নানান খেলনা। জিলাপি, বাতাসা, কদমা, ছাঁচের মিষ্টি, গজা, ল্যাংচা সন্দেশ, রসগোল্লা, প্যাড়াসহ নানা পদের মিষ্টি মেলাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
সাগরদাঁড়ি এম এম ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক উদয় সেন বলেন, সাগরদাঁড়ি যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার শেষ প্রান্তের একটি গ্রাম। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। এই নদের চতুর্দিকে সব গ্রামের মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারে বলে এই মেলা বেশি প্রাণবন্ত হয়। রাত যত বাড়ে, দর্শনার্থী তত বাড়ে।
গবেষক কবি খসরু পারভেজের মতে, এই মেলা শতাধিক বছরের পুরোনো। তিনি বলেন, ১৯১৯ সালে কলকাতার বিশিষ্ট কবি নগেন্দ্রনাথ সোম ‘মধুস্মৃতি’ গ্রন্থে লিখেছেন, মাইকেল মধুসূদনের জন্মতিথিতে এসে তিনি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। সেই হিসাবে মেলার বয়স কমপক্ষে ১০৬ বছর বলে মনে করেন খসরু পারভেজ।
তিনি বলেন, যেহেতু কবি নগেন্দ্রনাথ ১৯১৯ সালে এসে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন, সেহেতু এর আগে থেকেই এই মেলা হয় বলে ধারণা।
১৮২৪ সালের ২৫শে জানুয়ারি সাগরদাঁড়িতে জন্মগ্রহণ করেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কপোতাক্ষ নদের তীরে কবির পৈত্রিক বাড়ির সামনে ১৪ একর জমির ওপর এবারও আয়োজন করা হয়েছে মধু মেলার।
শান্তনু/ আই.কে.জে/