বুধবার, ১৯শে নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** কারাগারে পছন্দের খাবার না পেয়ে বন্দির মামলা *** আন্তর্জাতিক কার্ড দিয়ে কেনা যাবে বিমান টিকিট *** সিপিবির মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু আগামীকাল *** শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সামরিক বাহিনীর সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা *** আমরা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি, একটা দোলাচল চলছে: মির্জা ফখরুল *** ‘খাসোগি হত্যার বিষয়ে' কিছুই জানতেন না সৌদি যুবরাজ: ট্রাম্প *** সাংবাদিক মিজানুরকে তুলে নেওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: ‘তদন্তের পর জানতে পারব’ *** 'ছাত্র উপদেষ্টারা যাতে কোনোভাবেই দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন' *** রয়টার্সের পোস্ট ভুলভাবে উদ্ধৃত করে প্রচার *** সাংবাদিক সোহেলকে বাসা থেকে তুলে আনার কারণ জানাল ডিএমপি

রায়ের পর শেখ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির অবস্থান কি বদলাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৫৯ অপরাহ্ন, ১৭ই নভেম্বর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করলেও তিনি এখন যে দেশের আশ্রয়ে আছেন, সেই ভারত সরকার এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। খবর বিবিসি বাংলার।

তবে ভারতের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বিবিসিকে আভাস দিয়েছেন, এই রায়ের ফলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির অবস্থান আদৌ বদলাচ্ছে না এবং তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ারও কোনো প্রশ্ন উঠছে না।

বস্তুত শেখ হাসিনা এই পর্বে যবে থেকে ভারতে পা রেখেছেন, মানে সেই ৫ই আগস্ট ২০২৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এদেশে তাকে আশ্রয় বা আতিথেয়তা দেওয়া নিয়ে ভারতের অবস্থান অবিকল একই রকম আছে।

আর সেই ঘোষিত অবস্থানটা হলো–একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে এদেশে (ভারত) 'সাময়িক' (ফর দ্য টাইম বিয়িং) আশ্রয় দেওয়া হয়েছে–এর বেশি কিছু নয়।

আজ সোমবার (১৭ই নভেম্বর) বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার পরেও ভারতের সেই অবস্থান অপরিবর্তিতই থাকছে। এর অর্থ, তাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত–বা ভারতের মাটিতে তাকে আপাতত রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত–পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

তবে এখন এই প্রশ্ন উঠতেই পারে, দুই দেশের মধ্যেকার অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের যে দাবি বা অনুরোধ জানিয়েছিল–তার এখন কী হবে?

এর সহজ উত্তর হলো–সেই চিঠি পাওয়ার পর বছর ঘুরতে চললেও ভারত সেটি নিয়ে এতদিন একেবারে চুপচাপ বসেছিল, কিন্তু এবারে হয়তো তা নিয়ে মুখ খোলার জন্য তাদের ওপর চাপ বাড়বে।

প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে একটি কূটনৈতিক পত্র বা 'নোট ভার্বাল' পাঠানো হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। তার মাত্র দুদিনের মধ্যে সেই নোট ভার্বালের প্রাপ্তি স্বীকার করা হলেও এরপর তারা সেই অনুরোধ নিয়ে কী ভাবছে বা কী অবস্থান নিচ্ছে–ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিয়ে আজ পর্যন্ত একটি শব্দও খরচ করেনি।

তবে একান্ত আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্র বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বারবারই বলেছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তির হাজারটা ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে এই হস্তান্তরের অনুরোধ নাকচ করার বা দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রেখে কালক্ষেপণ করার অজস্র সুযোগ রয়েছে–প্রয়োজন হলে ভারত যে কোনো সময় সেই রাস্তাও নিতে পারে।

গত বছরের ডিসেম্বরে যখন প্রথম শেখ হাসিনাকে ফেরানোর অনুরোধ জানিয়ে নোট ভার্বাল পাঠানো হয়, তখন তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা সবে শুরু হয়েছে। তখনও রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক চার্জও গঠন করেননি, রায় ঘোষণা তো অনেক দূরের কথা।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতামন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা রুজু করা শুরু হয়ে গেছে–আদালত প্রাঙ্গণেই বর্ষীয়ান নারী নেত্রী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণিকে হেনস্থা করার বা আনিসুল হক বা সালমান এফ রহমানকে কিল-চড়-ঘুষি মারার মতো ঘটনাও ঘটছে।

সেই সব ঘটনার দৃষ্টান্ত দিয়ে ভারতের কর্মকর্তারা তখন অনানুষ্ঠিকভাবে সব সময়ই বলতেন, শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হলে তিনি যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হবেন না বা তিনি ন্যায় বিচার পাবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই কারণেই ঢাকার অনুরোধে সাড়া দেওয়া দিল্লির পক্ষে সম্ভব নয়।

তবে গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা–কারণ শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের আদালতে গণহত্যার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত একজন অপরাধী।

এমন একজন অন্য দেশের পলাতক (ফিউজিটিভ) ও দণ্ডিত অপরাধীকে ভারত কেন দিনের পর দিন ধরে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, সেই কৈফিয়ত দেওয়ার জন্য ভারতের ওপর অবশ্যই এখন চাপ বাড়বে।

ফলে ধারণা করা যেতেই পারে, আজকেই না হোক–খুব শিগগিরি ভারতকে আবার এই ব্যাখ্যা দিতে হবে যে কেন তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ উপেক্ষা করে যাচ্ছে।

সেই বিবৃতি বা বক্তব্য যখনই আসুক–তাতে অবশ্য এই প্রশ্নে ভারতের মৌলিক অবস্থান একেবারেই পাল্টাচ্ছে না।

অন্যভাবে বললে, শেখ হাসিনাকে আতিথেয়তা দেওয়ার জন্য ভারতকে হয়তো এখন নানা সাফাই বা কৈফিয়ত দিতে হবে–কিন্তু তার পরেও শেখ হাসিনাকে আদৌ বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত প্রত্যর্পণ চুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা আছে–আর সেটা হল, যার হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগটা যদি 'রাজনৈতিক প্রকৃতি'র হয় তাহলে সেই অনুরোধ খারিজ করা যাবে।

তবে, কোন কোন অপরাধের অভিযোগকে 'রাজনৈতিক' বলা যাবে না, সেই তালিকাও বেশ লম্বা–এর মধ্যে হত্যা, গুম, অনিচ্ছাকৃত হত্যা ঘটানো, বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো ও সন্ত্রাসবাদের মতো নানা অপরাধ আছে।

এখন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে সব মামলা রুজু হয়েছিল তার মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, গুম ও নির্যাতনেরও নানা অভিযোগ আছে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে এগুলোকে 'রাজনৈতিক' বলে খারিজ করা কঠিন।

তার ওপর ২০১৬ সালে যখন মূল চুক্তিটি সংশোধন করা হয়, তখন এমন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছিল, যা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে বেশ সহজ করে তুলেছিল।

সংশোধিত চুক্তির ১০(৩) ধারায় বলা হয়েছিল, কোনও অভিযুক্তের হস্তান্তর চাওয়ার সময় অনুরোধকারী দেশকে সেই সব অভিযোগের পক্ষে কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ না-করলেও চলবে–শুধু সংশ্লিষ্ট আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেশ করলেই সেটিকে বৈধ অনুরোধ হিসেবে ধরা হবে।

কিন্তু এরপরেও চুক্তিতে এমন কিছু ধারা আছে, যেগুলো প্রয়োগ করে অনুরোধ-প্রাপক দেশ তা খারিজ করার অধিকার রাখে।

যেমন, অনুরোধ-প্রাপক দেশেও যদি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও 'প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধে'র মামলা চলে, তাহলে সেটা দেখিয়ে অন্য দেশের অনুরোধ খারিজ করা যায়। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে অবশ্য এটা প্রযোজ্য নয়, কারণ ভারতে তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা হচ্ছে না বা অচিরে হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।

দ্বিতীয় ধারাটি হল, যদি অনুরোধ-প্রাপক দেশের মনে হয় "অভিযোগগুলো শুধু ন্যায় বিচারের স্বার্থে, সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি"–তাহলেও তাদের সেটি নাকচ করার ক্ষমতা থাকবে।

অভিযোগগুলো যদি 'সামরিক অপরাধে'র হয়–যা সাধারণ ফৌজদারি আইনের পরিধিতে পড়ে না–তাহলেও একইভাবে অনুরোধ নাকচ করা যাবে।

ফলে ভারত এখনো অনায়াসেই বলতে পারে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সঠিক ও সুষ্ঠু বিচার পেয়েছেন বলে তারা মনে করছে না এবং সে কারণেই তাকে হস্তান্তর করা সম্ভব নয়।

অর্থাৎ "অভিযোগগুলো শুধু ন্যায় বিচারের স্বার্থে, সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি"–এই ধারাটি ব্যবহার করেই তখন প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করা যাবে বলে দিল্লিতে অনেক পর্যবেক্ষকের অভিমত।

শেখ হাসিনা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250