রবিবার, ৯ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ১৫ জেলায় নতুন ডিসি *** জাহানারার যৌন হয়রানির অভিযোগ: তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন *** খালেদ মুহিউদ্দীনের ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে উদ্বেগ কেন? *** প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানালে আমরা যাব, অন্য দলকে দিয়ে আহ্বান কেন: সালাহউদ্দিন *** দেশের ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান কী *** কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান *** রাজশাহীর প্রশংসা উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের, এড়িয়ে গেলেন নির্বাচন প্রসঙ্গ *** আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে: শফিকুল আলম *** দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর *** আওয়ামী লীগের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে আমেরিকা, ইউরোপ!

নির্বাচন, বিচার ও দেশে ফেরা নিয়ে রয়টার্সকে যা বললেন শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৮:০০ অপরাহ্ন, ২৯শে অক্টোবর ২০২৫

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে আগামী বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া হলে দলটির লাখ লাখ সমর্থক এই নির্বাচন বয়কট করবে। ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা আজ বুধবার (২৯শে অক্টোবর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন। রয়টার্সের ইমেইলে পাঠানো প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেছেন।

শেখ হাসিনা জানান, তার দলকে বাদ দিয়ে হওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যেই সরকারই হোক তাদের সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন না এবং তিনি ভারতেই অবস্থান করবেন। ২০২৪ সালের আগস্টের ছাত্র নেতৃত্বে হওয়া রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের সময় দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন তিনি। খবর বিবিসি বাংলার।

তার বিদায়ের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ শাসন করছে। তারা আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছে। পনের বছর এক নাগাড়ে ক্ষমতায় থাকার পর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম তিনি সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দিলেন।

বাংলাদেশে গত বছরের ৫ই ডিসেম্বর এক আদেশে শেখ হাসিনার সব ধরনের 'বিদ্বেষমূলক বক্তব্য' গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সাথে আগের সব বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সব মাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলতেও আদেশ দেওয়া হয়েছে।

রয়টার্সকে দেওয়া ই-মেইল সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছেন, 'পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনী বৈধতা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ সমর্থক, এমন পরিস্থিতি থাকলে, ভোটে অংশ নেবে না। একটি কার্যকর রাজনৈতিক সিস্টেম চাইলে আপনি লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না।'

বাংলাদেশে ১২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ভোটার আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দীর্ঘকাল ধরে দেশটির রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন গত মে মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। এর আগে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে।

'আমরা আওয়ামী লীগের ভোটারদের অন্য দলকে সমর্থন করতে বলছি না। আমরা এখনো আশা করি শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আমরা নিজেরাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবো,' বলেছেন শেখ হাসিনা।

তবে তিনি বা তার পক্ষে কেউ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার সুযোগের জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সাথে নেপথ্যে আলোচনা করছেন কি-না সে বিষয়ে শেখ হাসিনা কিছু বলেননি। ড. ইউনূসের মুখপাত্ররা শেখ হাসিনার মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার অনুরোধে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি।

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে রূপান্তরের জন্য প্রশংসিত হলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভিন্নমত দমনের জন্য অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ২০২৪ সালে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। ওই নির্বাচন বিরোধী দলগুলো বর্জন করেছিল। তাদের শীর্ষ নেতারা হয় জেলে বা নির্বাসনে ছিলেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধাপরাধ বিচারের আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শেষ করেছে। তার বিরুদ্ধে ২০২৪ এর আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১ হাজার ৪০০ জনের মতো মানুষ সে সময় নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার।

মূলত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এসব ঘটনা ঘটেছে। একে দেশটির মুক্তিযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হাসিনা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বা অন্য কথিত অপরাধের সাথে তার ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতা ছিলো না।

'এই কার্যক্রমগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাটক,' বলেছেন তিনি। 'এগুলো ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে আনা হয়েছে, যেখানে দোষী সাব্যস্ত করে রায় আগেই ঠিক করা। আমাকে আগে নোটিশ দেওয়া বা আত্মপক্ষ সমর্থনের কার্যকর সুযোগ দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে,' বলেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ দেশের ভবিষ্যৎ ভূমিকা পালনে ফিরে আসবে, সেটা সরকারে হোক আর বিরোধী দলে হোক এবং তার পরিবারের এর নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তার ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত বছর রয়টার্সকে বলেছিলেন যে, দল চাইলে তিনি নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।

১৯৭৫ সালের এক সামরিক অভ্যুত্থানে তার পিতা, তিন ভাই, মা-সহ পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে মেরে ফেলা হয়। শুধু শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। শেখ হাসিনা বলেন, দিল্লিতে তিনি মুক্তভাবেই বাস করছেন কিন্তু তার পরিবারের সহিংস ইতিহাসের কারণে তিনি সতর্ক থাকছেন।

কয়েক মাস আগে রয়টার্সের একজন সাংবাদিক শেখ হাসিনাকে লোধি গার্ডেনে হাঁটতে দেখেছিলেন। তার সঙ্গে দুজন ব্যক্তি ছিলেন যাদের তার নিরাপত্তারক্ষী মনে হয়েছিলো। তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যারা তাকে চিনতে পারছিলেন তাদের প্রতি তিনি মাথা নেড়ে সাড়া দিচ্ছিলেন।

শেখ হাসিনা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250