ছবি- সংগৃহীত
প্রায় তিন দশক ধরে পঞ্চগড়ে একই আঙ্গিনায় মুসলিম ও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় উপাসনা করে আসছেন। চলতি বছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে উভয় ধর্মের অনুসারীরা বন্ধুত্বের বন্ধন গড়ে তুলেছেন। এভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের জিতাপাড়া নতুন হাট মসজিদ এবং জিতাপাড়া নতুনহাট সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দেখা গেছে এই সম্প্রীতির চিত্র।
স্থানীয়দের সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, একপাশে ঢাক-ঢোল এবং পূজা অর্চনার সুর, অন্যপাশে আতরের সুবাস। একই আঙ্গিনায় ভিন্ন ধর্মের মানুষরা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের উপাসনা করছে। নামাজের সময় ঢাক-ঢোল বন্ধ করে দেয়া হয় এবং নামাজ শেষে ফের শুরু হয় উৎসবের আয়োজন।
মসজিদ এবং মন্দিরের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৬০ মিটার। এখানে কোনো ধরনের বিভেদ ছাড়াই মুসলিম ও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের ধর্ম পালন করছেন। তবে উভয় পক্ষ মসজিদ ও মন্দিরের উন্নয়নে সরকারি সহায়তার দাবি করেছেন।
স্থানীয় মুসল্লি লুৎফর রহমান ও আজাদুল হক বলেছেন, “এখানে মসজিদটির বয়স প্রায় ৩৫ বছর, মন্দিরের বয়স প্রায় ৩০ বছর। আমরা সকলেই মিলেমিশে থাকি। সময় মতো নামাজ পড়ি, তারা পূজা করে। এতে কারো কোনো বাধা নেই।”
নতুন বস্তি গ্রামের আব্দুল বাতেন বলেন, “আমরা সুশৃঙ্খলভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করি। আযানের সময় তাদের বাদ্যযন্ত্র বন্ধ থাকে। নামাজ শেষে আমরা তাদের নিরাপত্তায় সহায়তা করি। তবে আমাদের মসজিদটি উন্নয়নের জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।”
জিতাপাড়া নতুনহাট সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের ভক্ত বিশ্বনাথ বর্মণ বলেন, “এটি আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। আমরা মন্দিরের পাশে মসজিদের সঙ্গে মিলেমিশে আছি। আযান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখি।”
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মিঠুন রায় বলেন, “এখানে দীর্ঘ সময় ধরে পূজা হচ্ছে। আগে কিছুটা ভয় কাজ করলেও এবার সুষ্ঠুভাবে পূজা করছি। সরকারকে আমাদের পুরাতন মন্দিরের উন্নয়নে সহায়তা করার অনুরোধ করছি।”
পুরোহিত আপন চক্রবর্তী বলেন, “অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে আমাদের মন্দির ও মসজিদ রয়েছে।”
গড়িনাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দিপু বলেন, “এখানে উভয় ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্ম পালন করছেন। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই।”
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী জানান, “একসাথে অবস্থানকারী দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্ম পালন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলার মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।”
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন