ছবি: সংগৃহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুইটি পুকুরে চালু হয়েছে দেশের প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পুকুরের উপরে সারি করে সাজানো হয়েছে সোলার প্যানেল। বাতাস ও ঢেউ সামলাতে সক্ষম ফ্লোটারের উপরে ভাসছে প্রায় ১,৫০০ সোলার প্যানেল। এর নিচেই রয়েছে বিভিন্ন জাতের মাছ। এতে পুকুরের পানির উপরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পানির নিচে মাছ চাষ করা হচ্ছে একই সঙ্গে। জেলার সদর উপজেলার আতাহার-বুলনপুরের নবাব অটো রাইস মিলের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করে এই ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
নবাব অটো রাইস মিলের নবাব মৎস্য খামার প্রকল্পের পুকুরে স্থাপন করা হয়েছে এই ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত ২৯ মে বিকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি জুলস পাওয়ার লিমিটেড।
এই ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দিনে চার ঘণ্টা সর্বোচ্চ ১.৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আর অন্য সময় এটি কমা-বাড়া করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে ও কোনো প্রকার জমির ব্যবহার না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে। তবে সূর্যের আলো না থাকলে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে এক বছর এই ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরে মাছ চাষের কোনও ক্ষতি না হলে ব্যাপকহারে বাড়ানো হবে এমন প্রকল্প।
জুলস পাওয়ার লিমিটেডের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে কাজ করছি। এতোদিন ধরে ঢাকায় কাজ করলেও এই প্রথম ঢাকার বাইরে এবং ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা।
আরো পড়ুন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজেই শিখে নিয়েছে বাংলা
ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৬ একর আয়তনের একটি জলাশয়ের ৫০ শতাংশ জমি ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে যেহেতু মাছ চাষ হচ্ছে তাই ফুডগ্রেড প্লাস্টিকের ফ্লোটার ব্যবহার করা হয়েছে যাতে মাছের ক্ষতি না হয়। এর লাইফ টাইম হচ্ছে প্রায় ২৫ বছর। ঝড় কিংবা টর্নেডোর কথা বিবেচনায় অ্যাংকরিং সিস্টেমও এতে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নবাব অটো রাইস মিলে দৈনিক ২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। তবে এখন পর্যন্ত ২ দশমিক ৩ মেগাওয়াট বিদুৎ এই রাইস মিলে আমরা সরবরাহ করতে পারছি। তবে কারখানা বন্ধের দিন বা লোড না থাকলে বিদ্যুৎ চলে যাবে জাতীয় গ্রিডে। তবে কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যাবে তা এখানো বলা সম্ভব না।
নবাব গ্রুপের চীফ অপারেটিং অফিসার নাহিদ হোসেন বলেন, আমরা এখানে আগে থেকেই রুই, কাতলার মতো দেশি মাছ চাষ করছি। আমরা কয়েকবার মাছও ধরেছি। পানির অংশে যেহেতু কোনো স্থাপনা নেই তাই মাছ ধরতেও কোনো সমস্যা হয়নি। আবার চাইলে সৌর প্যানেলগুলো এদিক সেদিন স্থান পরিবর্তনও করা যায়। তাই একসঙ্গে বিদুৎ উৎপাদন ও মাছ চাষে কোনো সমস্য হচ্ছে না। আর আমাদের প্রতিমাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। প্রকল্প সফল হলে খরচের ৭০ শতাংশ সাশ্রয় হবে বলে আশা করছি।
জুলস পাওয়ার লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক হাসানুল জামি বলেন, নবাব অটো রাইস মিলের ছাদের উপর ২২০০ সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। আর পুকুরে রয়েছে প্রায় ১৫০০ সৌর প্যানেল। প্রকল্পটি দেখভাল ও পর্যবেক্ষণের জন্য এখানে সর্বদা আমাদের লোকজন থাকে।
আগামী ১২ বছর জুলস পাওয়ার লিমিটেডকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে নবাব অটো রাইস মিল। এরপরের ১৫ বছর সম্পূর্ণ ফ্রিতে বিদ্যুৎ পাবে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি।
এসি/আই. কে. জে/