ছবি-সংগৃহীত
দিন কয়েক আগেই বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। কাজের ফাকে ঘুরে এসেছিলেন ‘জলের গান’ ব্যান্ডের সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী রাহুল আনন্দের ধানমন্ডির বাসার নিজস্ব স্টুডিওতে। গানে, গল্পে, আড্ডায় রাহুল আনন্দের সঙ্গে কাটিয়েছেন প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। আর এতেই অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছিল দেশে এত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী থাকতে রাহুল আনন্দের বাড়িতেই কেন গেলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট?
রাহুল আনন্দের জনপ্রিয়তাও নেহায়েত কম নয়। তবু্ও সংগীতপ্রেমীরা খুজতে শুরু করেছেন রাহুলের সঙ্গে ফ্রান্সের যোগসূত্র কোথায়। সেই উত্তর দিলেন রাহুল আনন্দ। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেসবুকে খোলাসা করেন সব। ‘নানামুখী প্রশ্ন, কৌতুহল এবং আমার উত্তর’ এমন একটি লেখা দিয়ে শুরু করেন।
‘এতো বড় মাপের একজন রাষ্ট্রীয় অতিথি হঠাৎ আমার দরজায়! স্বাভাবিকভাবেই, আমি অবাক হই, অভিভূত হই’
- রাহুল আনন্দ
সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী
‘জলের গান’ ব্যান্ড
তার বাসায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট আসার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমি এর উত্তর বারবার নানা মাধ্যমে দিয়েছি। আবারও দিচ্ছি। প্রথমত, সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিলো আলিয়ঁন্স ফ্রঁসের। তারা চেয়েছেন তাদের রাষ্ট্রপতিকে (প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ) বিভিন্ন মাধ্যমের কিছু শিল্পীর সঙ্গে কথা বলাতে এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আবহ দেখাতে।
এ আয়োজনে আমি ছাড়া অন্য শিল্পীরাও ছিলেন। তারা হলেন কামরুজ্জামান স্বাধীন ও মৌসুম, আফরোজা হোসাইন সারা, আশফিকা রহমান। আমরা সবাই আঁলিয়াস ফ্রঁন্সের সঙ্গে আগে নানা আর্ট ও মিউজিক প্রজেক্টে কাজ করেছি। আমার ধারণা সেই কারণেই আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।’
আরও একটি কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি। এই ব্যান্ড শিল্পী বলেন, ‘অন্য যেকোনো স্থানেই এই সাক্ষাত হতে পারতো। কিন্তু উনি চেয়েছেন আমার স্টুডিও দেখতে, বাদ্যযন্ত্র দেখতে। ঘটনাক্রমে, আমার স্টুডিও এবং যন্ত্র তৈরির কারখানা আমার বাড়িতেই। আমি যে বাড়িতে থাকি তা শত বছরের পুরানো স্থাপত্য, যার কারণে ইতিহাসের একটা চিহ্ন আছে। হয়তো সেও এক আকর্ষণীয় ব্যাপার ছিল।’
এই সময় ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে রাহুল আনন্দের বাড়িতে গিয়েছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীও। নিজের বাড়িতে তাদের দেখে আপ্লুত হয়েছেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘এতো বড় মাপের একজন রাষ্ট্রীয় অতিথি হঠাৎ আমার দরজায়! স্বাভাবিকভাবেই, আমি অবাক হই, অভিভূত হই।
সত্যি বলতে পুরোটা সময় আমি বিস্ময়ের এক ঘোরে ছিলাম ! এদিকে সময় খুব সীমিত, তাই মনোনিবেশ করতে হয়েছে আতিথেয়তায়। আমি আমার দেশের নাগরিক তথা সরকার ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে যথাযোগ্য সম্মান ও আমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী বরণ করতে চেষ্টা করেছি। অতিথিসেবা আমাদের পূর্বপুরুষের সংস্কৃতির প্রধান অঙ্গ এবং দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। সেই জন্যেই করেছি।’
আরো পড়ুন: কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হলেন বৃন্দাবন দাস
সবশেষে তিনি লেখেন, ‘তাকে (ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ) আমাদের স্টুডিওতে আতিথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত কোনও আবেগ, লাভ-লোকসান, লেনাদেনা বা উদ্দেশ্য ছিল না এবং নেই। বরং মানুষের ভালোবাসার কথাই বলেছি তাকে, একটা সুন্দর সবুজ পৃথিবী গড়বার কথাই বলেছি।’
উল্লেখ্য, রাহুল আনন্দ গান ও মঞ্চ নাটকের মানুষ। ২০০৬ সালে বন্ধু ও সহশিল্পীদের সঙ্গে গঠন করেন ‘জলের গান’ ব্যান্ড। এই দলের হয়ে তিনি বেশ কিছু নন্দিত গান উপহার দিয়েছেন। এছাড়া, দেশীয় সুরের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, রাহুল নিজেও বেশ কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেছেন।
এসি/ আই.কে.জে