ছবি-সংগৃহীত
রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই নোয়াপাড়া জামদানির হাট। রূপগঞ্জে তারাব সুলতানা কামাল সেতুর পাশ দিয়ে শীতলক্ষ্যা তীরঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই হাট। এটি অন্য পাঁচটি হাটের মতো নয়। এখানে শুধু পাইকারি ব্যবসায়ীরাই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ভিড় করছে সাধারণ ক্রেতারা।
সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বসে এ হাট। এখানে প্রতি হাটবার জামদানি বিক্রি হয় অর্ধকোটি টাকারও বেশি।
অনেকের কাছে এটি গল্প মনে হলেও এটিই সত্য। একটি মাত্র টিনশেড ঘর ছাড়া এখানে তেমন কিছু নেই। এ শেডের ভেতরে রংবেরঙের জামদানির পসরা সাজিয়ে বসেন তাঁতিরা।
জানা গেছে, এই হাটে ভোর থেকেই জড়ো হতে থাকেন তাঁতি, ফড়িয়া, দালাল, পাইকারসহ খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতা ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। হাটে ক্রেতারা চট, মাদুর বিছিয়ে বসে থাকেন জামদানি ক্রয় করার জন্য। বিক্রেতাদের দেখা যায় দাঁড়িয়ে দুই হাতে শাড়ি উঁচিয়ে ধরে হাঁক দেন ‘এই জামদানি, শেষ দুইটা আছে।’
এই দুটি বিক্রি হয়ে গেলে আরো দুটি হাতে ওঠে। ‘দুইটা’ আর যেন শেষ হয় না। এভাবে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলে। হাঁকডাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে বেচাকেনা। প্রতি হাটে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার জামদানি বিক্রি হয় এই হাটে।
নোয়াপাড়া, রূপগঞ্জের রূপসী, মৈকুলী, খাদুন, পবনকুল, কাজীপাড়া, মোগরাকুল, বরগাও, সোনারগাঁ এবং আড়াইহাজারের তাঁতিদের তৈরি জামদানি সংগ্রহ করতে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
সেখান থেকে জামদানি চলে যাচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে। যাচ্ছে নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমে। একেকটি শাড়ি দেড় হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
জামদানি ছাড়া অন্য কোনো কাপড় কিংবা পণ্য এ হাটে পাওয়া যায় না। জানা যায়, প্রতি হাটে ১০ থেকে ১৫ হাজার পিস শাড়ি বেচাবিক্রি হয়। টাকার হিসাবে প্রায় এক কোটি টাকা লেনদেন হয় হাটে।
শাড়ি বিক্রিতে তেমন কোনো ইজারা দিতে হয় না। লন্ডনপ্রবাসী ফাতেমা আসাদ জানান, খুলনা থেকে ছোট বোন আফসানাকে নিয়ে হাটে এসেছি বিয়ের অনুষ্ঠানে শাড়ি গিফট করব। তিন হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার ১৫টি শাড়ি কিনেছি। এখানে তুলনামুলক দাম কম।
আরো পড়ুন: সেন্টমার্টিনে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিনিময়ে মিলছে চাল-ডাল-ডিম
ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকার গৃহিনী শিখা দাস বলেন, ‘স্বামীকে নিয়ে প্রথম জামদানি হাট দেখার জন্য এসেছি। পছন্দ হলে জামদানি শাড়ি কিনব।’
সোনারগাঁ উপজেলার বরগাও এলাকার তাঁতি আয়নাল হক বলেন, ‘১৫ বছর ধরে এ হাটে আসি। সাতটি জামদানি নিয়ে এসেছি, চারটি বিক্রি করেছি। বর্তমানে আমরা দাম পাচ্ছি না। সাত দিনে ধরে একটি শাড়ি বানাই, সেটি সর্বোচ্চ বিক্রি চার হাজার টাকা। অথচ এ শাড়িটি ভারতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা অথবা দেশের কোনো মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।’
গন্ধর্বপুর থেকে আসা তাঁতি মহিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে জামদানি পাঞ্জাবির কাপড় তৈরি করে বিক্রি করি। ৮০০ থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত জামদানি পাঞ্জাবির কাপড় বিক্রি করি।’
এসি/ আই. কে. জে/