শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজনৈতিক ইতিহাসে ঘৃণিত হত্যাকাণ্ড ২১শে আগস্ট

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, ২১শে আগস্ট ২০২৩

#

২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। ফাইল ছবি

সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট সমাবেশের ডাক দেয় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। সভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়ার পরপরই হয় ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণ। সেই বিস্ফোরণে নিহত হোন ২২ জন এবং আহত হন প্রায় তিন শতাধিক। নিহত ২২ জনের মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান এবং ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফও ছিলেন। 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি অন্যতম ঘৃণিত হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পরবর্তী সময়ে নানা ঘটনার কথা উঠে এসেছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে এর বিচারকার্যও বদলেছে। 

তবে ২১শে আগস্টের হামলা প্রকৃতপক্ষে কারা ঘটিয়েছিল তা নিয়ে বাংলাদেশে বিস্তর বিতর্ক এখনো রয়েছে। এ বিতর্কের কারণসমূহ সাধারণত কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে যা অনেকটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিক।

২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন বিএনপি সরকার এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। সেসময় জজ মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে এ ঘটনার দায়ে আটক করা হয়। এ ঘটনার জন্য বিচারে তাকে দোষীও সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে বেরিয়ে আসে জজ মিয়া নাটকের মূল রহস্য। একের পর এক তথ্য বের হয়ে আসতে থাকলে বিচারের মোড়ও পাল্টাতে থাকে। 

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারকার্য নতুন করে শুরু করে। এতে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বিএনপির সাবেক নেতাদের নাম জড়িয়ে পড়ে। যদিও শুরু থেকেই বিএনপি এই হামলার পেছনে নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে।

বিএনপির অধিকাংশ সমর্থক মনে করে, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বিএনপি জড়িত নয় এবং হামলাটি আওয়ামী লীগই ঘটিয়েছে বলে মনে করেন। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা পর্যন্ত দাবী করেন যে, ঘটনাটি আওয়ামী লীগের সাজানো এবং আওয়ামী লীগ সে সময় জনগণের সহানুভূতি আদায় ও তৎকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য নিজেরাই এমন ঘটনাটি ঘটিয়েছিল। 

তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর খোজলেই ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা কারা ঘটিয়েছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রথমত, বিএনপির ভাষায় ২১শে আগস্টের হামলা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই ঘটিয়েছিল। এটা তাদের সাজানো নাটক ছিল। তাহলে বিএনপিপন্থীদের কাছে এ প্রশ্নটি করা যায় যে, আওয়ামী লীগই যদি জড়িত হয় তাহলে বিচারের নামে জজ মিয়া নাটকটি কেন সাজানো হল?

এছাড়া সেসময় বিচারের নামে এত প্রহসন কেন করা হয়েছিল? এছাড়া এ হামলার ব্যাপারে মুফতি হান্নান যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তা কি মিথ্যা ছিল? 

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান সহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেচে যান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে পরবর্তীতে এটি প্রমাণিত হয় যে, হামলার উদ্দ্যেশ্য ছিল তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। ২১শে আগস্ট বিকেলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে একটি সমাবেশে অস্থায়ী ট্রাকের মঞ্চে শেখ হাসিনা বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্রই তাকে উদ্দ্যেশ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এসময় আওয়ামীর লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরী করে শেখ হাসিনাকে ঘিরে ধরেন। ভাগ্যক্রমে একটি গ্রেনেড ট্রাকের পাটাতনে লেগে ফেরত চলে যায়। ফলে বেচে যান মঞ্চে থাকা নেতাকর্মীরা কিন্তু গুরুতর আহত হন ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফ। হামলার পর অতিদ্রুত শেখ হাসিনাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে গাড়ীতে করে রওনা হোন তার নিরাপত্তা কর্মীরা। হামলাকারীরা সে গাড়ীকে লক্ষ্য করেও গুলি ছুড়ে কিন্তু তাতেও বেচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা। 

ইতোমধ্যে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের ফাসির রায় দেয়া হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে এবং আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

২১শে আগস্ট ছাড়াও শেখ হাসিনাকে অন্তত ১৭বার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু প্রতিবারই ভাগ্যক্রমে বেচে গেছেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এম.এস.এইচ/

২১ আগস্ট

খবরটি শেয়ার করুন