শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিন্দু ধর্ম মতে সপ্তাহের কোন দিন কোন দেব-দেবীর পুজো করা উচিৎ

ধর্ম ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:০৭ অপরাহ্ন, ১লা আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

হিন্দু ধর্ম অনুসারে প্রত্যেকই কোনও না কোনও দেব-দেবীর পুজো করে থাকেন। মনে শক্তি বাড়াতে দেবতার স্তূতি করি। তাঁর কাছে মনের সমস্ত সুখ-দুঃখের কথা বলি। তবে একটা জিনিস লক্ষ করার মতো যে, প্রত্যেকদিন কিন্তু প্রত্যেক দেবতার পুজো হয় না। এক একটি বিশেষ দিনে এক এক দেবতার পুজো করা হয়। আপনারাও নিশ্চয়ই করেন। জানেন পূরাণ মতে আসলে সপ্তাহের কোন দিন কোন দেবতার পুজো করা উচিত? 

সোমবার

সোমবার মানেই শিবের বার। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এই দিনে শিবের পুজো করা হয়। মহাদেবকে তুষ্ট করতে অনেক পূণ্যার্থীই এই দিন উপবাস করে থাকেন। একাধিক প্রাচীন বই অনুসারে প্রতি সোমবার দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা করার পর যদি এই ‘পঞ্চ অক্ষর’ শ্লোকটি পাঠ করা যায়, তাহলে একাধিক উপকার মেলে। বিশেষত খারাপ শক্তির প্রভাবে কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়, সেই সঙ্গে আর্থিক ও শারীরিক উন্নতিও ঘটে ৷

মঙ্গলবার 

সপ্তাহের সাত দিন একেক জন দেবতার পুজো করার জন্য বরাদ্দ। হিন্দু শাস্ত্র মতে বিশেষ দিনে সেই বিশেষ দেবতার পুজো করলে ফল মেলে অনেক বেশি। যেমন মঙ্গলবার হনুমান জির পুজো করলে পারিবারিক শান্তি কখনও দূরে পালায় না। শুধু তাই নয়, খারাপ দৃষ্টির প্রভাবও কমতে শুরু করে। মেলে আরও অনেক উপকার। কিন্তু মঙ্গলবারই বা কেন হনুমান জির পুজো করতে বলা হয়? আসলে মরুথি মঙ্গলবার জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর সেদিন ছিল পূর্ণমা। তাই তো এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে মঙ্গলবার হনুমান জির পুজো করলে দারুণ উপকার মেলে।

মঙ্গলবার বজরঙ্গবলীর পুজো করলে মিলবে সৌভাগ্য, কেটে যাবে সকল সংকট। তাই তো তিনি সংকটমোচন। এই দিনে গেরুয়া বসন, লাল ফুল, লাল চন্দন এবং গেরুয়া সিঁদুর সহযোগে হনুমানজীর পুজো করলে যে-কোনও রকমের বাধা-বিপত্তি থেকে উদ্ধার পাবেন। এইদিন সিদ্ধিদাতা গণেশ, কালী পুজো করা হয়। যাঁরা এই দিন ব্রত করেন, তাঁরা খাবারে নুন দেন না। নুন ছাড়া খাবার খান।

বুধবার 

এই দিনে গণেশ পুজো করা উচিত বলে পূরাণ। জীবনে যদি অধিক ধন-সম্পদের অধিকারী হতে চান, তাহলে বুধবার করে অবশ্যই গণেশ পুজো করুন। প্রসাদে তাঁকে অর্পণ করুন লাড্ডু। তবে এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর আর-এক রূপ ভগবান ভিথাল দেবের পূজা করা উচিত্‍, আজকের দিনে এই দেবের পূজা করলে সব দিক থেকে মঙ্গল হবে, কেটে যাবে নানা বাধা বিপত্তি। 

বৃহস্পতিবার

বৃহস্পতিবার মানেই লক্ষ্মীবার। এই দিন লক্ষ্মীর পুজো করা হয়। ধনসম্পত্তি, অর্থ, প্রতিপত্তি, ব্যবসায়ে শ্রী বৃদ্ধির জন্য বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীর আরাধনা করে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা শুরু করেন। লক্ষী দেবী শুধু ধনদৌলতের দেবী নন। তিনি সৌন্দর্যের প্রতীক।

সব কিছু সুন্দরভাবে শ্রীমণ্ডিত করতে গেলে লক্ষীদেবীর আরাধনা করতে হয়। বাড়ির মেয়েরা সাধারণতঃ প্রতি বৃহস্পতিবার এই ব্রত করেন সংসারের মঙ্গল কামনার জন্য। যথাযথ সুফল পেতে কতগুলি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তবেই মন্ত্র পাঠ করা উচিত, না হলে কিন্তু কোনও ফলই মেলে না। 

শুক্রবার

মঙ্গলবারের মতো শুক্রবারেও একাধিক দেবতার পুজো করা হয়। এই দিন দেবী মহালক্ষ্মী, সন্তোষী, দুর্গা এবং দেবী অন্নপূর্ণার পুজো করা হয়। শুত্রুবার দিন মা সন্তোষী দেবীর পূজা করা হয়। মা সন্তোষী দেবীর ব্রতকথা -- ॐ শ্রী সন্তোষী মহামায়ে গজানন্দন দায়িনী শুক্রবারঃ প্রিয়ে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে।।

পৌরাণিক মতে, গণেশের দুই পুত্র শুভ আর লাভ- এর মনোবাসনা পূর্ণ করতে কন্যা রূপে দেবী সন্তোষীর সৃষ্টি করেছিলেন গণেশ। সেই দিন ছিল রাখী পূর্ণিমা, শুক্রবার। শুভ আর লাভের ইচ্ছা ছিল তাঁরা বোনের হাতে রাখী বাঁধবেন। তাই দাদাদের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করায় তাঁর নাম হল সন্তোষী। মা সন্তোষী সন্তোষের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি ভক্তের সকল মনোষ্কামনা পূর্ণ করেন। তিনি রক্তবস্ত্র পরিহিতা।

মায়ের ত্রিনয়ন হলো চন্দ্র সূর্য এবং অগ্নি। তিনি রত্ন সিংহাসনে বিরাজ করেন, তিনি সকল প্রকার ঐশ্বর্যের অধিশ্বরী। চতুর্ভূজা মায়ের এক হাতে থাকে তীক্ষ্ণ ধারালো তরবারি, যা তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পরিচয়। অপর হাতে ত্রিশূল। ত্রিশূলের তিনটি ফলা ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের প্রতীক। সত্ত্ব, রজ, তম এই ত্রিগুণের সমাহার হল ত্রিশূল।

বাকি দুই হাতে বরাভয় ও সংহার। মায়ের বাহন বৃষ। গো জাতি সত্ত্ব গুণী সাত্ত্বিক গুণের আধার। বৃষর মধ্যে দুটি গুণ দেখা যায়, যখন সে শান্ত তখন সে ধীরে ধীরে চলে। কিন্তু রেগে গেলেই সে ঠিক উল্টো। বিষকে সবসময় মায়ের পদতলে শান্তভাবে দেখা যায়। মানুষের মধ্যেও ক্রোধ ও শান্ত দুই ভাব বিরাজ করে। ক্রোধে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য; আবার শান্ত ভাবে প্রসন্ন।

শনিবার

এই দিন শনি দেবতার পুজো করা হয়।সেই সঙ্গে শক্তির উৎস মা কালীর পুজো করলেও শুভ ফল মিলবে। সেইসঙ্গে কেটে যাবে সকল বাধা। শনিবার শনি ও বজরংবলির দিন বলে গণ্য করা হয়। এই দিনের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। এই দিনে হনুমানের পুজো করলে শনির প্রকোপ থেকে মুক্তি পাবেন। আসলে শনিবার হনুমান জির পুজো করার পিছনে একটি গল্প কথাকে দায়ি করা যেতে পারে।

হিন্দু শাস্ত্রের উপর লেখা একাধিক প্রাচীন গ্রন্থেও এই গল্পের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে লেখা রয়েছে রাবণ তার ছেলে মেঘনাথকে অপরাজেয় করে তোলার উদ্দেশ্য়ে একবার কঠোর তপস্যা শুরু করেছিলেন। কিন্তু যেনতেন প্রকারে ভগবান শিব এবং বিষ্ণু এই ক্ষমতা মেঘনাথকে দিতে চাইছিলেন না।

সে খবর রাবনের কানে পৌঁছানো মাত্র তিনি নটি গ্রহকে অপহরণ করে এমন এক জায়গায় বন্দি বানিয়ে রাখেন যে সেখান থেকে পালানো এক প্রকার অসম্ভব ছিল। এই সময়ই হনুমান জি, দেবী সীতার খোঁজে লঙ্কায় এসে পৌঁছেছিলেন এবং তিনিই প্রথম দেখতে পান একটি অন্ধকার কুঠুরিতে বন্দি করে রাখা হয়েছে গ্রহদের।

এই দেখে তিনি তাদের মুক্ত করে দেন। এই ঘটনার পর নটি গ্রহের অন্যতম শনিদেব এতটাই প্রসন্ন হন যে তিনি হনুমান জিকে আশীর্বাদ করে বলেন তার খারাপ দৃষ্টি কখনও হনুমান জি এবং তার ভক্তদের উপর পড়বে না। এই কারণেই তো শনিবার শ্রী হনুমানের পুজো করা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন: রাধার মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল! কেনই বা কৃষ্ণ ভেঙেছিলেন তাঁর বাঁশি!

রবিবার

রবিবার সূর্য দেবতার দিন। এই দিন সূর্যের পুজো করা হয়। এই দিনে উপবাস করলে সূর্য ওঠার আগে ও সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে খাবার খেয়ে থাকেন। 

এসি/ আই. কে. জে/



হিন্দু ধর্ম

খবরটি শেয়ার করুন