শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষাঙ্গনে বাড়ছে আতঙ্ক, মব জাস্টিসের শেষ কোথায়?

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:৩৪ অপরাহ্ন, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৪

#

প্রতীকি ছবি - সংগৃহীত

গত দেড় মাসে দেশে ৩৩ জনকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একদিনেই দেশের শীর্ষ দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর অপবাদ দিয়ে তোফাজ্জল নামে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। একই দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একইভাবে কয়েকদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সদ্যোজাত সন্তানের জন্য ঔষধ আনতে গিয়ে তিনি গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছাত্রদের হাতে এভাবে গণপিটুনিতে পর পর কয়েকজন ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় হতভম্ব দেশের বিবেকবান মানুষরা।

দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন? এ প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। যারা আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দেবেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন, তারা কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকান্ডে জড়িত একজন ছাত্র দায় স্বীকার করে বলেছেন, আবেগের বশীভূত হয়ে তিনি পিটিয়েছেন। এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর কথা। শুধু আবেগের বশীভূত হয়েই একজন মানুষকে হত্যা করবেন? অপরাধ বিশ্লেষকরা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও বিচার প্রক্রিয়ার উপর আস্থাহীনতার কারণে এক শ্রেণির মানুষ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস পাচ্ছে।

এসব পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মনে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন কার উপর মব জাস্টিসের মতো ভয়ঙ্কর খড়গ আছড়ে পড়বে সবার মনে সেই দুশ্চিন্তা ভর করছে। বর্তমানে মব জাস্টিসের নামে যে ধরনের ঘটনা ঘটছে তার অধিকাংশই পরিকল্পিত। এর অন্যতম কারণ প্রতিশোধ প্রবণতা ও আধিপত্য বিস্তার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকগণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা, মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়া এসবই হচ্ছে প্রতিশোধপরায়ন মানসিকতা থেকে। কেউ কেউ মনে করছেন, এখন চাইলেই সবকিছু করতে পারি, কোনো বিচার হবে না। এই সুযোগটাই নিচ্ছে একশ্রেণির দুর্বৃত্তরা।

বর্তমান সরকার জোর দিয়ে বলেছেন, তারা এই মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে। সরকারকে দ্রুত ও দৃশ্যমান কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধিতে আছে, মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত জনতার অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হলে সবার ন্যূনতম ‘যাবজ্জীন কারাদন্ড’ হবে। দুই-এক ঘটনার দ্রুত বিচার হলে সরকারের যেমন সুনাম বৃদ্ধি পাবে, তেমনি অপরাধ প্রবণতাও কমে আসবে।

আই.কে.জে/

মব জাস্টিস

খবরটি শেয়ার করুন