ছবি : সংগৃহীত
মায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সন্তান গড়ে উঠে একজন আদর্শবান মানুষ হয়ে। কারণ একজন আদর্শ মা একটি আদর্শ সন্তান তৈরি মূল কারিগর। মা এবং সন্তানের সম্পর্ক নিঃশর্ত ভালোবাসার। কিন্তু সেই ভালোবাসায় রয়েছে স্নেহ আর শাসনের যথাযথ সমন্বয়। আদর্শ মা হতে গেলে এই সমন্বয়টা বজায় রাখা খুব জরুরি। কীভাবে তা বজায় রাখবেন, এর জন্য রয়েছে কিছু টিপস।
বন্ধুত্ব তৈরি করুন
সন্তানের সঙ্গে সহজ সখ্য বজায় রাখুন। তাহলে সে শুধু ছোট ছোট সমস্যাই নয়, গভীর এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোও আপনার সঙ্গে আলোচনা করবে।
আত্মবিশ্বাসী হতে শেখান
জীবনের বিভিন্ন ব্যর্থতাকে সহজভাবে নিতে শেখান আপনার সন্তানকে। পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, সে চাইলে সফল হবেই—এ আত্মবিশ্বাস ওর মধ্যে গেঁথে দিন। এর সঙ্গে এটাও শেখান কোনো কিছুতে সফল না হলেই জীবন ব্যর্থ হয়ে যায় না।
মতামতকে গুরুত্ব দিন
ছেলেমেয়েরা ছোট, তাই পরিবারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ওদের মতামত না নিলেও কিছু ছোট ছোট ব্যাপারে ওদের মতামতকে গুরুত্ব দিন। এভাবেই ওরা সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। আর পরিবারে যে ওদেরও গুরুত্ব আছে, এটাও ওরা বুঝতে পারবে।
ভালোবাসা প্রকাশ করুন
আপনার ছোট ছোট আচরণে ভালোবাসা যেন প্রকাশ পায়। জড়িয়ে ধরে আদর করুন, চুমু খান। এতে আপনার সঙ্গে দৃঢ় হবে আপনার সন্তানের মানসিক বন্ধন। সন্তানের কোনো সমস্যায় তার কাঁধে হাত রেখে কথা বলুন। তাতে সে আশ্বস্ত হবে। কখনোই ভালোবাসায় কোনো শর্ত জুড়ে দেবেন না। যেমন ক্লাসে প্রথম হলে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাব; বরং তাকে আপনার ভালোবাসা দিয়ে বোঝান যেকোনো অবস্থায়, যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি তার সঙ্গে আছেন।
আরো পড়ুন : মাকে ভালোবাসার দিন—বিশ্ব মা দিবস আজ
স্বাবলম্বী করে তুলুন
সন্তানের নিজের কাজ নিজেকেই করতে শেখান। স্কুলে ভর্তির পর থেকে জুতা পরা, জামা-কাপড় পরা, নিজের স্কুলব্যাগ গোছানো, নিজের জিনিস ঠিক জায়গায় রাখার অভ্যাস করান।
আত্মসম্মানবোধ তৈরি করুন
মানুষ হিসেবে নিজেকে সম্মান করার শিক্ষা ওকে দিন। কেউ যদি ওর সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তার প্রতিবাদ করতে শেখান। এমন কোনো কাজ যেন সে না করে, যাতে সে নিজেই নিজের কাছে ছোট হয়ে যায়। এই শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই ওর মধ্যে গেঁথে দেবেন।
সন্তানকে সময় দিন
প্রতিদিন নিজের কাজের ফাঁকে অন্তত কিছুটা সময় বের করতে চেষ্টা করুন, যে সময়টা হবে শুধু আপনার এবং আপনার সন্তানের। সেই সময়টায় ভারি আলোচনা করবেন না। ওর সঙ্গে গল্প করেন। ওর ভালো লাগা-খারাপ লাগা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা জেনে নিন। আপনার ছেলেবেলার গল্প ওর সঙ্গে করতে পারেন, এতে ও আনন্দ পাবে।
আচরণ ও নীতিবোধ শেখান
খুব ছোট থেকেই যেহেতু মায়ের হাত ধরেই সন্তানের পথচলা শুরু হয়, তাই সহবতের শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব মায়েরই। ওকে সামাজিকতা শেখান। কীভাবে সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলতে হয়, বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া হলে কীভাবে মেটাতে হয়, উৎসব-অনুষ্ঠানে সবার সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়—এ রকম সব শিক্ষা ওকে দিন। এর সঙ্গে শেখান নীতিবোধ। বড়দের গায়ে পা না দেওয়া, তাঁদের সম্মান করে চলা, মিথ্যা কথা না বলা, কারো ক্ষতি না করা, না বলে অন্যের জিনিস না নেওয়া এমন নানা বিষয় ওকে শেখান।
অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না
অন্যের সঙ্গে তুলনা আপনার সন্তানকে এগিয়ে যেতে তো উৎসাহ দেবেই না, বরং ওকে তিলে তিলে অবসাদে ভোগাবে। তাই কোনো কিছুতে খারাপ করলে কখনোই অন্যের সঙ্গে তুলনায় যাবেন না।
প্রশংসা করুন
সন্তান কোনো ভালো কাজ করলে অবশ্যই তার প্রশংসা করেন। আপনার প্রশংসা ওর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে। কিন্তু মনে রাখবেন, প্রশংসা করা মানেই আবার মাথায় তোলা নয়। প্রশংসার চোটে আপনার সন্তান যেন ওভার কনফিডেন্ট না হয়ে যায়, সে বিষয়েও সচেতন থাকবেন।
সুস্থ দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখুন
সন্তানের সামনে কখনোই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবেন না। এতে ওর মনের ওপর খুব খারাপ প্রভাব পড়বে। ওর কাছে আপনারা দুজনই প্রিয়। আপনারা ঝগড়া করলে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। আপনাদের দুজনের সমস্যা হতেই পারে, কিন্তু তা সন্তানের আড়ালে মেটান। শিশুর ভালোভাবে বড় হওয়ার জন্য সুস্থ পারিবারিক পরিবেশ খুব জরুরি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলে সন্তানও ভালো থাকে।
প্রয়োজনে শাসন করুন
বিভিন্ন পরিস্থিতির প্রয়োজনে সন্তানকে শাসন করেন। এটা খুব জরুরি। কী কারণে তাকে শাসন করছেন, এটা সম্পর্কে যেন ওর পরিষ্কার ধারণা থাকে। তা না হলে সে আপনার শাসনের ভুল মানে বের করতে পারে।
মাত্রাতিরিক্ত অধিকার খাটাবেন না
সন্তানকে আগলে রাখার দায়িত্ব আপনার। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ছেলেমেয়ের নিজস্ব একটা জীবন গড়ে ওঠে। তৈরি হয় ওর নিজস্ব বন্ধু-বান্ধব বলয়, গড়ে ওঠে একান্ত ওর নিজের কিছু ভালোলাগা বা পছন্দ-অপছন্দ। বিশেষ করে ছেলেদের ক্ষেত্রেই অনেক মায়েরা এই সময় অতিরিক্ত অধিকার খাটিয়ে ফেলেন। কিছু জায়গা ওদের নিজস্ব থাকতে দিন। প্রতিটা বিষয়ে অযথা হস্তক্ষেপ করবেন না।
সন্তানের সামনে নিজেকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরুন
ছোটরা যা দেখে তাই শেখে। তাই নিজের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। সন্তানকে কোনো বিষয়ে মানা করার আগে দেখে নিন আপনি নিজে সেটা করেন কি না। আপনি নিজে যদি অন্যের সঙ্গে নিজের জিনিস শেয়ার করেন, তাহলে তা দেখে দেখেই আপনার সন্তান ভাগাভাগি করা শিখবে। কোনো গরিব-দুস্থ মানুষকে আপনি যখন সন্তানের সামনে সাহায্য করবেন, তখন আপনার সন্তানও শিখবে যে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করতে হয়।
এস/ আই.কে.জে/