শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোদির ‘জনপ্রিয়তার ভিত’ নাড়িয়ে দেন যে ইউটিউবার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:৩৪ অপরাহ্ন, ৯ই জুন ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর পাকিস্তানের, এমনকি বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি নাম ভেসে বেড়াচ্ছে। তিনি হলেন ধ্রুব রাঠি। ধ্রুব রাঠি সেইসব ইনফ্লুয়েন্সারদের একজন, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছেছেন। তার কন্টেন্টগুলোতে তিনি প্রায়ই নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি’র বিরোধিতা করেন। এমনকি, ভারতের সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময়ও তার বানানো ভিডিওগুলো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে।

এবছর তিনি বারবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) ট্রেন্ডে থেকেছেন এবং গত এক মাস ধরে তিনি সেখানে একটানা ট্রেন্ড করছেন।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশেই তাকে নিয়ে কেন এত আলোচনা চলছে?

গত ৪ঠা জুন যখন ভারতের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়া শুরু করে, তখন ধ্রুব রাঠি তার এক্স অ্যাকাউন্টে লেখেন— “নেভার আন্ডারস্টিমেট দ্য পাওয়ার অব দ্য কমন ম্যান’, অর্থাৎ, ‘সাধারণ মানুষের ক্ষমতাকে কখনোই অবমূল্যায়ন করবেন না।’ তার একেকটি পোস্ট ও ভিডিও মানুষের মনে এতটাই নাড়া দিচ্ছে যে সবার মুখে মুখে এখন তার নাম।

কে এই ধ্রুব রাঠি 

ধ্রুব রাঠি একজন ভারতীয় ইউটিউবার, যার ইউটিউবে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে এখন। ফেসবুকে তার সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা তিন মিলিয়নেরও বেশি। তার একেকটি ভিডিও কোটি কোটি মানুষ দেখছেন।

তার জন্ম ভারতের রাজধানী দিল্লির নিকটবর্তী হরিয়ানা রাজ্যের রোহতক জেলায়। হরিয়ানা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য জার্মানিতে চলে যান। জার্মানিতে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ওপর ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি তার ওয়েবসাইট 'ধ্রুব রাঠি ডটকম'-এ নিজের সম্বন্ধে লিখেছেন যে তিনি ভিডিও তৈরি করতে পছন্দ করেন। তার ভাষায়, ‘তথ্যবহুল ও শিক্ষামূলক কন্টেন্ট তৈরির মাঝে আমার দক্ষতা নিহিত; এমনসব কন্টেন্ট, যেগুলোতে বিভিন্ন জটিল বিষয়ের সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত ও সহজ ব্যাখ্যা থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভিডিও’র মাধ্যমে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা সত্যকে তুলে ধরতে এবং গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, র‍্যাশনালিজম, ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও প্রগতিশীল মূল্যবোধ প্রচারে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

‘আমার পড়াশুনার বিষয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও রিনিউয়্যাবল এনার্জির ওপর। কিন্তু অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর আমার গভীর আসক্তি আছে। এ বিষয়ের ওপর আমার দ্বিতীয় স্নাতক ডিগ্রিও আছে। এছাড়া, আমি ভ্রমণ করতেও পছন্দ করি,’ওয়েবসাইটে আরও লিখেছেন তিনি।

ধ্রুব রাঠীকে নিয়ে করা ফেইসবুক পোস্ট

গত বছর টাইম ম্যাগাজিনের ‘নেক্সট জেনারেশন লিডারস ২০২৩’ এর তালিকায় নাম উঠেছিলো ২৯ বছর বয়সী ভারতীয় ইউটিউবার ধ্রুব রাঠির নাম। তিনি তার ‘ফ্যাক্ট-চেকিং’ কাজের জন্য এবং  বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয়ের ওপর কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।

কাতারভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যম ধ্রুব রাঠি সম্বন্ধে লিখেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষের মতো ২০১৪ সালে রাজনীতিতে চলমান দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে মোদি’র আবেগময় বক্তৃতা শুনে ধ্রুব রাঠিও আশার আলো খুঁজে পেয়েছিলেন।

তখন তিনিও মোদির সমর্থক ছিলেন এবং মোদির উত্থানকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মাথায় তিনি মোদি’র সমালোচক হয়ে ওঠেন। মোদির বিষয়ে তিনি আশাহত হন ২০১৫ সালে। তখন আম আদমি পার্টি দিল্লিতে একটি দুর্নীতিবিরোধী হেল্পলাইন চালু করেছিলো, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার, মানে মোদি সরকার সেই হেল্পলাইনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার রাজ্য সরকারকে চাপ প্রয়োগ করেছিলো।

রাঠি একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটি আমার খুব বিস্ময়কর এক ব্যাপার ছিল। আমার মনে হয়েছে তারা ভারত থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে আগ্রহী নয়।’

তার মতে, যখন তিনি দেখলেন অনেক মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেল মোদি ও বিজেপির পক্ষে কথা বলছে, তখন তার হতাশা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিলো।

নির্বাচনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছেন?

ধ্রুব রাঠি ও তার কাজ ভারতীয় নির্বাচনের ওপর কতটা প্রভাব বিস্তার করেছিলো, তা বলা কঠিন। তবে গত ৩রা জুন, ভোট গণনার একদিন আগে তিনি 'মাই লাস্ট মেসেজ' শিরোনামে প্রায় ২৪ মিনিটের দীর্ঘ একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন।

সেই ভিডিওটি এত বেশি জনপ্রিয় হয়েছে যে ভারতের নাগরিকরা তা শুধু দেখছেন না, বারবার শেয়ারও করছেন। সেখানে তিনি বর্ণনা করেছেন যে তিনি কীভাবে শিক্ষামূলক কন্টেন্ট তৈরি করতে করতে রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর কন্টেন্ট তৈরি করা শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষামূলক ভিডিও বানাতে পছন্দ করি তাই আমি এটি করি। তবে ফেব্রুয়ারির পরে এমন কিছু ঘটে যা আমি থামাতে পারিনি। চণ্ডীগড় নির্বাচনের জালিয়াতি প্রকাশ্যে আসে এবং দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন প্রিসাইডিং অফিসার ধরা পড়েন। তখন আমার মনে হয়েছে যে যথেষ্ট হয়েছে, এবার আমার শুরু করা উচিৎ।’

‘এরপর আমি সর্বপ্রথম ‘ডিক্টেটরশিপ’ (স্বৈরাচারতন্ত্র) এর ওপর একটি ভিডিও বানিয়েছিলাম এবং আমি ভাবিনি যে এটি কোনো প্রভাব ফেলবে। কিন্তু যখন ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়, আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে ২০ মিলিয়ন মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন এবং বর্তমানে তা ২৫ মিলিয়নে পৌঁছেছে।’

‘আমি বুঝতে পারলাম যে আমি যা অনুভব করছি, আপনারাও ঠিক একই অনুভূতির মাঝ দিয়ে যাচ্ছেন। আমাকে যেসব বিষয় উদ্বিগ্ন করে তুলছিলো, আপনাদেরও একই বিষয় উদ্বিগ্ন করছে। এমনকি, এরপর আমার এ বিষয়ের ওপর আর কোনো ভিডিও বানানোর ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু কাকতালীয়ভাবে হয়ে যায়। কারণ এরপর এমন দুটো ঘটনা ঘটে…প্রথমত, অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আটক করা হয়েছিলো এবং দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছিলো।’

ধ্রুব রাঠীকে নিয়ে করা টুইট

‘আমি আমার প্রথম ভিডিওতে যা বলেছিলাম, তা সত্যি হচ্ছে। এরপরে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে মানুষকে জাগ্রত করতে হবে এবং এই কাজটি পাহাড়ে আরোহণের চেয়েও বেশি কঠিন।’

অনেকে ভারতের নির্বাচনী ফলাফলে ধ্রুব রাঠির ভিডিওগুলোর প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে ধ্রুব বলেন যে তার মতো আরও অনেকে আছেন, যারা নির্ভয়ে তাদের কাজ করছেন।

এই বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি ভারতের সুপরিচিত সাংবাদিক রাভিশ কুমার, আভিসার শার্মা, আজিত আঞ্জুম প্রমুখের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পুনম আগরওয়াল, মানীষা পান্ডে, নিধি সুরেশ এবং আরিফা খানম শেরওয়ানি, মীনা কোতওয়াল, ড. মেডুসাসহ গোলা, কাবিরন, গ্রিমা, নেহা সিং রাঠোরের মতো আরও অনেকের কথাও বলেন।

মনসুর নামক একজন ব্যক্তি ধ্রুব রাঠির ছবি শেয়ার করে লিখেছেন,‘হাওয়া বদল করে দেওয়া ভারতীয় নায়কের সাথে পরিচিত হন, যিনি একাই মোদির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।’

সাবেক সাংবাদিক আকাশ ব্যানার্জী তার ‘দ্য দেশ ভক্ত’নামক ইউটিউব চ্যানেলে ধ্রুব রাঠির স্বৈরাচারের ভিডিওটি সম্পর্কে বলেন, যে এটি সরাসরি সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে। সেই ভিডিওটি লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখলেও তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

সূত্র: আল জাজিরা

এইচআ/ আই.কে.জে/

লোকসভা নির্বাচন ধ্রুব রাঠী

খবরটি শেয়ার করুন