আদালত প্রাঙ্গণে আসামির ওপর হামলা - ফাইল ছবি
‘মব জাস্টিস’ কথাটি আমাদের দেশে তেমন প্রচলিত ছিল না। তবে ইদানীং কথাটা বহুল প্রচারিত। ‘মব’ শব্দের অর্থ মূলত একটি উত্তাল ক্ষুব্ধ বা হুজুগে জনতা, যেটি হিংস্র হয়ে উঠে। আকস্মিকভাবে সৃষ্ট এই ক্ষুব্ধ বা হুজুগে জনতা দ্বারা যখন কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় তখন তাকে ‘মব লিঞ্চিং’ বলে। আর এই ধরনের জনতার দ্বারা সংঘটিত গণপিটুনি কিংবা হত্যাকাণ্ডকে যখন বিচার হিসেবে বলা হয় তখন তাকে ‘মব জাস্টিস’ বলা হয়। বাংলাদেশে গণপিটুনি বা গণধোলাই নতুন কিছু না হলেও বেশ কিছু বছর ধরে এটি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে।
গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহেদকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা ও খুলনায় ধর্মীয় উসকানির অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে উৎসব মন্ডল নামে এক কিশোরকে যেভাবে গণপিটুনি দেয়া হয়েছে, তা প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে ব্যথিত করেছে। এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণেও একশ্রেণির উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলার ঘটনা বারবার ঘটছে।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে পট পরিবর্তনের পর ক্ষমতাচ্যুত বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। তাদেরকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে নেয়া হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যদিয়েও তাদেরকে শারীরিক হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এক্ষেত্রে মহিলা নেত্রীরাও শারীরিক হেনস্তা থেকে বাদ যাননি। এসব ঘটনাকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি সুস্পষ্ট মানবাধিকার লংঘন। গ্রেফতারকৃতরা অপরাধ করতে পারে, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকতেও পারে। সে সকল বিষয় আইনগত সমাধানের জন্যই তো তাদের আদালতে আনা হচ্ছে, বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। যে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি তার যেমন অধিকার, ঠিক তেমনি তার নিরাপত্তা বিধান করাও সরকারের দায়িত্ব।
প্রত্যেক দেশের নিজস্ব আইন আছে এবং সে অনুযায়ী আদালত বিচার করে। তার ব্যত্যয় ঘটলে বিচার কার্যে বিঘ্ন ঘটে। আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রতিটি নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। কিন্তু ‘মব জাস্টিস’ বা ‘জনতার বিচার’ নামে বিচার করা ফৌজদারি অপরাধ। এটি আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। শুধু সন্দেহের কারণে কিংবা ব্যক্তিগত শত্রুতার বশীভূত হয়ে আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। এই ধরনের অসুস্থ চর্চা বন্ধ করতে হবে। খুব দ্রুত সরকার মব জাস্টিস বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আইন লংঘনকারী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে——সেটাই প্রত্যাশা।
আই.কে.জে/