সোমবার, ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১লা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারুনসহ ৯৪ পুলিশের বিরুদ্ধে ২৮৪ মামলা

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:০৩ অপরাহ্ন, ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সাবেক মন্ত্রী-এমপি, নেতাকর্মী, পুলিশ, বিচারক ও আমলাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় মামলা। 

গত বুধবার (৪ঠা সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত শুধু ঢাকায় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৮৪টি। এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক শতাধিক পুলিশ সদস্যের নাম রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনে গুলি চালিয়ে লাশ ফেলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন শতাধিক পুলিশ সদস্য। অনেকে আটকও হয়েছেন।

পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে ৩৮টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছেন পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩৬টি। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ৩৩, ডিএমপি যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ২৭, স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১, ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইকবাল হোসাইনের নামে ৮, যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার এস এম মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধেও ৮টি এবং র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে হয়েছে ৫টি মামলা। মামলাগুলোর মধ্যে অধিকাংশই হত্যা মামলা রুজু হয়েছে।

মামলায় নাম রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, সহকারী পুলিশ কমিশনার, একাধিক থানার ওসি, ইন্সপেক্টর, এসআই ও কনস্টেবলদেরও। সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে যাত্রাবাড়ী থানায় ৯১টি।

সরকারের কাছ থেকে আন্দোলন দমাতে যে মাত্রার নির্দেশনা পেয়েছিলেন তার চেয়ে প্রয়োগ করেছেন বহুগুণ বেশি। এ ধরনের ৯৪ জন পুলিশ সদস্যের নামে মামলা হলেও আরও বেশ কিছু পুলিশ সদস্যের নামে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা ও মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করার অভিযোগে মামলা প্রক্রিয়াধীন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ই আগস্ট বিকেলেও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গাজীপুর জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বেপরোয়া পুলিশ সদস্যদের নেতৃত্বে নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। আন্দোলন দমাতে শেখ হাসিনা সরকার দফায় দফায় ইন্টারনেট বন্ধ করে, যাতে ওই সময়ে পুলিশ সদস্যদের বেপরোয়া তাণ্ডব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ না পায়। সম্প্রতি পর্যায়ক্রমে সেসব নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে শুরু করেছে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা কিছু মামলার এজাহার এবং ওই সময়ের ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশের তাণ্ডবের বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন: ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডি ৩ দিনের রিমান্ডে

৫ই আগস্ট সরকার পতনের দিন বিকেলেও গুলি চালায় পুলিশ। এসব গুলিতে অনেকে নিহত হন। নিহতদের মধ্যে অনেকের মরদেহের হদিস পর্যন্ত মেলেনি এখনো। এর মধ্যে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানা এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন মো. হৃদয় (২০) নামে এক কিশোর। ঘটনার দিনের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ছেলেটিকে গুলি করার পর বস্তায় ভরে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ওই দিন তার মতো আরও কয়েকজনের মরদেহ গুম করেছে থানা পুলিশ।

একইভাবে ৫ই আগস্ট দুপুরের পর ঢাকার আশুলিয়া থানার প্রধান ফটকসংলগ্ন স্থানে একটি ভ্যানে রাখা ছিল বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ। ওই ভ্যানেই হাত-পা ধরে পুলিশকে আরেকটি মরদেহ তুলতে দেখা যায়। সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল এ সংক্রান্ত ভিডিও। পরে ভিডিওটি তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে।

এর মধ্যে ওই ঘটনায় সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহিল কাফীকে গত সোমবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। গতকাল কাফীর বিরুদ্ধে লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা এবং হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়।

এসি/কেবি

মামলা হারুন

খবরটি শেয়ার করুন