সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের ঋণপ্রবাহ বাড়ছে

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, ৫ই জুলাই ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের ঋণপ্রবাহ বাড়ছে। পদ্মা সেতু রেল লিংক, কর্ণফুলী টানেল, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্ল্যান্টের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে চীনের অর্থায়নে। আরও কয়েকটি বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পিজিসিবির আওতায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের উন্নয়ন, ডিপিডিসির আওতায় বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ প্রকল্প। এ ছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালীতে সাগরের তলদেশ দিয়ে তেল সরবরাহের জন্য নির্মিত পাইপলাইন এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এটি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম প্রকল্প নামে পরিচিত। এর আগে গত বছরে জুলাইয়ে রাজধানীর আফতাবনগরের কাছে দাশেরকান্দিতে চালু হয় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম একক পয়ঃশোধনাগারের কার্যক্রম। ঋণের বাইরে অনুদানের টাকায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আটটি মৈত্রী সেতু নির্মাণ করেছে চীন। 

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে, যেখানে স্বাধীনতার পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দিয়েছিল দেশটি, সেখানে গত ১২ বছরে দিয়েছে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে প্রতিশ্রুত ঋণ ১০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। ঋণ দেওয়া উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে চীন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে বিশ্বব্যাংক থেকে, যা মোট ঋণের ৩১ শতাংশ। এর পরই রয়েছে এডিবি ২৩ শতাংশ এবং মোট ঋণের ১৭ শতাংশ জাপানের কাছ থেকে নেওয়া। এর পরই রাশিয়া ১০ শতাংশ এবং মোট ঋণের ৯ শতাংশ নেওয়া চীনের কাছ থেকে। 

গত এক দশকে চীনের প্রতিশ্রুত ঋণ ও ঋণছাড় দুটোই বেড়েছে। ২০১৩ সালে চীনের ঋণ দেওয়ার অঙ্গীকার ছিল ৩৫ দশমিক ৯৮ কোটি ডলার। ছাড় করে ৭ দশমিক ৭ কোটি ডলার। ২০১৪ সালের প্রতিশ্রুতি ছিল ৫ কোটি ডলার, ঋণছাড় করে ৪৭ দশমিক ২৭ কোটি ডলার। 

মূলত ২০১৪ সাল থেকে চীনা ঋণের প্রবাহ ও ছাড় বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে চীন কোনো ঋণের প্রতিশ্রুতি না দিলেও ১২ দশমিক ১২ কোটি ডলার ছাড় করে। ২০১৬ সালের প্রতিশ্রুত ঋণ ১৯ দশমিক ৫ কোটি ডলার, ছাড় ১১ দশমিক ৫৭ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে ১২৪ দশমিক ৪৭ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয় দেশটি। ওই বছর ছাড় হয় ৬ দশমিক ৩৮ কোটি ডলার।

২০১৮ সালে প্রতিশ্রুত ঋণ ছিল প্রায় ৩৬২ দশমিক ৪৫ কোটি ডলার, যা এখন পর্যন্ত সর্বাধিক। ওই বছরে ছাড় হয় ৯৭ দশমিক ৮৪ কোটি ডলার বা প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে প্রতিশ্রুত ঋণ ৭ দশমিক ২৫ কোটি ডলার হলেও ছাড় হয় ৫১ দশমিক ৫০ কোটি ডলার। ২০২০ সালে চীন ২৪২ দশমিক ৭৪ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ছাড় করে ৬৯ দশমিক ৫৪ কোটি ডলার। 

২০২১ সালে কোনো প্রতিশ্রুতি না থাকলেও ৮৮ দশমিক ৭৯ কোটি ডলার ছাড় করে দেশটি। ২০২২ সালে প্রতিশ্রুত ঋণ ১১২ দশমিক ৬৯ কোটি ডলার, ছাড় ৯৮ দশমিক ৯৫ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ২৭ দশমিক ৬২ কোটি ডলার প্রতিশ্রুত ঋণের বিপরীতে ছাড় ১১৩ দশমিক ২৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশকে এ যাবত মোট ১০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। ছাড় হয়েছে ৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ছাড় হওয়ার মধ্যে ১০ কোটি ডলার শুধু অনুদান।

আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন। জানা যায়, এবারের সফরের বিশেষ দিকটি হবে বাংলাদেশের জন্য চীনের ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৪০ কোটি ইউয়ানের বেশি ঋণ। এর মধ্যে বাণিজ্য–সহায়তার আওতায় ৫০০ কোটি ডলার ও বাজেট সহায়তার আওতায় ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় বাংলাদেশকে ঋণ দেবে দেশটি। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে যেভাবে টাকা রুপিতে লেনদেনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় ঢাকা ইউয়ানে লেনদেনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে চীন বাংলাদেশকে যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছে তার ৯৫ শতাংশই এসেছে গত ১২ বছরে। শেষ ছয় বছরে এসেছে ৮৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়েছে দেশটির ঋণছাড়। অর্থাৎ, ২০১৩ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই (এক অঞ্চল, এক পথ) চালুর পর থেকেই বড় আকারে ঋণ দেওয়া শুরু করে।

কেবি/ আই.কে.জে

উন্নয়ন প্রকল্প

খবরটি শেয়ার করুন