বুধবার, ৩রা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:২৫ অপরাহ্ন, ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৩

#

ছবি-সংগৃহীত

চলতি বছর ৫২.৫ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. আনিছুর রহমান। এই বিজ্ঞানী জানান,  গত বছর ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছিল। এবার দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। মূলত অনুকূল পরিবেশ এবং তেমন বাধা না পাওয়ায় পদ্মা-মেঘনাসহ নদীগুলোতে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ইলিশ বেশি ডিম ছেড়েছে। তবে এটি নির্দিষ্ট করে বলা ঠিক হবে না।

যদিও আনিছুর রহমান গবেষণায় সাড়ে ৫২ শতাংশ মা ইলিশের ডিম ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যে হারে মা ইলিশের ডিম ছাড়া বাড়ছে তাতে ইলিশ উৎপাদন প্রতি বছর বাড়বে। জেলে ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী জাটকা অভয়াশ্রম কর্মসূচি সফলভাবে শেষ করা গেলেই উৎপাদন বাড়বে।

ইলিশ গবেষকরা জানান, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে মা ইলিশ সাগর মোহনা হয়ে ডিম ছাড়তে পদ্মা-মেঘনাসহ বড় নদীতে আসে। সমুদ্র সংযুক্ত ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার নদী অঞ্চল এবং চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ ছয়টি অভয়াশ্রমে মা ইলিশ ডিম ছাড়ে।

চাঁদপুরে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু কাউছার দিদার জানান, এ বছর মা ইলিশ রক্ষায় ১২ই অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন এসব এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল।

মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির ওই সময়ে এবং এর আগে ও পরের সাত দিন বিভিন্ন নদীতে গবেষণায় প্রচুর পরিমাণে ইলিশের লার্ভা ও জাটকা পেয়েছেন। এ বছর নদনদীতে অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে।

গবেষক ড. আনিছ বলেন, এ বছর মা ইলিশ চলাচলে তেমন বাধার মুখে পড়েনি। প্রশাসনের খবরদারি থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা আগের তুলনায় কম মা ইলিশ শিকার করেছেন। এ ছাড়া শত শত ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন না থাকায় ইলিশের ডিম বা লার্ভা নষ্ট কম হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার সময়ে পড়া অমাবস্যা ও পূর্ণিমা ডিম ছাড়ার জন্য উপযুক্ত ছিল।

আরো পড়ুন: আকামা ছাড়া ব্যবসা করা যাবে ওমানে

তিনি জানান, একটি মা ইলিশ ১০ থেকে ২০ লাখ ডিম ছাড়ে। এর মধ্যে যদি ১০ ভাগও টেকে, তাহলে আগামী মৌসুমে নতুন করে অন্তত ৪০ হাজার কোটি ইলিশ পাওয়া যাবে। জেলেরা বেপরোয়া না হলে এবং নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ ও অপরিকল্পিত বালু না তোলা হলে ইলিশ উৎপাদন বাড়তেই থাকবে।

এবার ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমাণ বেশি বলে জানিয়েছেন জেলেরাও। চাঁদপুরের রনা গোয়াল এলাকার জেলে সাত্তার জমাদার বলেন, ‘এই বছর নদীতে বেশির ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ছে বইলা আমাগো কাছে মনে হয়। কারণ জালে ধরা পড়া অনেক ইলিশের পেটে ডিম আছিল না।’

নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০১৮ সালে ৪৭.৭৫ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪৮.৯২, ২০২০ সালে ৫১.২, ২০২১ সালে ৫১.৭ এবং ২০২২ সালে ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। চাঁদপুর জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, প্রতি বছরই দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৫.১৭ লাখ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫.৩৩ লাখ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫.৫ লাখ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫.৬৫ লাখ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৬ টনে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশ ধরায় এ বছর সাড়ে ৩ শতাধিক জেলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে সাড়ে ২১ লাখ মিটার কারেন্ট জাল এবং প্রায় ২ টন ইলিশ। আগামী মার্চ-এপ্রিলে জাটকা মৌসুমে সঠিকভাবে সুরক্ষা দিতে পারলে ইলিশের উৎপাদন পৌনে ছয় লাখ টনে পৌঁছাতে পারে। 

এসি/

রেকর্ড পরিমাণ ডিম মা ইলিশ

খবরটি শেয়ার করুন