শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় মণ্ডপে হামলার ১২ মামলায় ইকবাল ছাড়া সবাই জামিনে

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৭:২৮ অপরাহ্ন, ১৪ই অক্টোবর ২০২৩

#

ছবি: বিবিসি

দুই বছর আগে শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে কুমিল্লার কয়েকটি মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১২টি মামলার কোনোটির বিচার শেষ হয়নি। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সব আসামিই জামিনে রয়েছেন।

পুলিশ বলছে, প্রতিটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে; বিচারকাজ চলছে। অপরদিকে দ্রুত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা বলছেন, বিচারহীনতা নতুন অপরাধ করতে অপরাধীদের উৎসাহিত করে।

২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লা নগরীর নানুয়াদিঘির পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলে কোরআন শরিফ দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। 

একে কেন্দ্র করে ওইদিন নগরীর চারটি মন্দির ও সাতটি পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে। নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকায় রক্ষাকালী মন্দির, কাপড়িয়াপট্টি শ্রীশ্রী চান্দমনি রক্ষাকালী মন্দির, মনোহরপুর এলাকার রাজ রাজেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দিরের বেশি সহিংসতা হয়েছিল সেদিন।

রাজেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দিরে সহিংসতার সময় ইটের আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিলীপ কুমার দাস নামে একজন মারা যান। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, ফেনী, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে বাহার সমর্থকদের হামলা

এ ঘটনায় মোট ১২টি মামলা হয় কুমিল্লা কোতোয়ালিসহ বিভিন্ন থানায়। এর মধ্যে ছয়টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই চারটি এবং কোতোয়ালি মডেল থানা দুটি মামলার তদন্ত করে।

মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার মামলায় কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়।

সিআইডির কুমিল্লা কার্যালয় জানায়, পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় হোতা ইকবাল হোসেন ছাড়াও ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মণ্ডপে কোরআন দেখে জরুরি সরকারি সেবা ৯৯৯ খবর দেওয়া নগরীর মৌলভীপাড়ার ইকরাম হোসেন ওরফে রেজাউল হক, পাশের দারোগাবাড়ির মাজারের সহকারী খাদেম নগরীর উত্তর চর্থা এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান ফয়সাল, তার সঙ্গী মো. হুমায়ূন কবির এবং কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিন আহমেদ বাবু।

এ মামলায় আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে ইকবালসহ এই পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে ইকবাল ছাড়া বাকি আসামিরা জামিনে আছেন।

ইকবালের মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির কুমিল্লার পরিদর্শক মো. নুরুল হাকিম বলেন, মূল মামলাটিতে ইকবালসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের মার্চ মাসে। এ মামলায় আদালতে মোট দুটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় একটি, অন্যটি সন্ত্রাস দমন আইনে। প্রতিটি মামলাই এখন আদালতে বিচারাধীন। 

সিআইডির তদন্ত শেষে আদালতে দেওয়া ছয়টি মামলার অভিযোগপত্রে মোট ১০৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

সম্প্রতি গত ৪ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পূজার প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বাহাউদ্দিন বাহার ‘মদমুক্ত পূজা করতে হবে’ বলে বক্তব্য দেন। শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম বাহাউদ্দিন বাহারের সাম্প্রদায়িক ধৃষ্টতাপূর্ণ এমন উক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ।

পরে এই ঘটনার জেরে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কর্মসূচিতে ধাওয়া দিয়েছে মহানগর যুবলীগ। এ সময় দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। জানা যায়, সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লা আল মাহমুদ সহিদ এ মিছিলে নেতৃত্ব দেন। 

এসকে/

কুমিল্লা দুর্গাপূজা মণ্ডপে হামলা ১২ মামলা

খবরটি শেয়ার করুন