শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:০৯ অপরাহ্ন, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান বিশ্বে কৃষিখাতে বিপ্লব ঘটাতে যেসব দেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, তাদের মধ্যে নেদারল্যান্ডস অন্যতম। ইউরোপের দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক।

২০২১ সালে তাদের এ ধরনের পণ্য রপ্তানি প্রায় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ১০ হাজার ৪৭০ কোটি ইউরোতে পৌঁছেছিল। বিশ্বের খাদ্যবাজারের এত বিশাল একটি অংশের চাহিদা মেটানো চাট্টিখানি কথা নয়! এটি করতে গিয়ে ভয়ানক চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের পরিবেশকে। 

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নেদারল্যান্ডস কীভাবে কৃষিখাতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে, তার নমুনা দেখতে পাওয়া যায় ওয়াগেনিনজেন ইউনিভার্সিটির ‘দ্য ফার্ম অব দ্য ফিউচার’ বা ভবিষ্যতের খামারে গেলে।

আরও পড়ুন : তেলাপিয়া মাছ কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিপূর্ণ! 

নাম শুনে হয়তো মনে হতে পারে, রোবট কৃষিকাজ করছে, মাথার ওপর ড্রোন উড়ে বেড়াচ্ছে- এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে এ ধরনের খামারে গেলে। কিন্তু তা নয়। বাস্তবে ফার্ম অব দ্য ফিউচারে গেলে দেখতে পাবেন মাঠের পর মাঠ ছেয়ে রয়েছে সবুজ ফসলে। তার পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো গাছপালা। এর মাঝে উঁকি দিচ্ছে কয়েকটা উইন্ডমিল।

এ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক উইজনন্দ সুক্কেল জানান, নেদারল্যান্ডসে সাধারণত এ ধরনের মাঠে শুধু ভুট্টা বা গমের মতো একক ফসল চাষ করা হয়। কিন্তু লেলিস্টাডের এ এলাকাটিতে তারা একই সময়ে আটটি ভিন্ন ফসল চাষের পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গম, পেঁয়াজ, আলু ও মটরশুটি।

জাতিসংঘের হিসাবে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা এক হাজার কোটিতে পৌঁছাবে। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চান সুক্কেল ও তার সহকর্মীরা। পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কমাতেও কাজ করছেন তারা।

সুক্কেল আরও বলেন, আমরা ভাবছিলাম, কোনো ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করে, কীটনাশকজনিত কোনো ক্ষতি এড়িয়ে এবং যেটি ভারী বৃষ্টিপাত বা দীর্ঘ শুষ্ক সময়ের মধ্যেও টিকে থাকবে, এমন উচ্চ খাদ্য উৎপাদন খামার ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় কি না। এই লক্ষ্যে টেকসই কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ শুরু করেন সুক্কেল ও তার দল। 

আরও পড়ুন : শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল নিউজিল্যান্ড, হতাহতের খবর নেই

সলের পাশে পোকামাকড়ের বাস

ভবিষ্যতের এ খামারে পোকামাকড়ের খাদ্য ও আশ্রয় নিশ্চিত করার জন্য সারি সারি বহুবর্ষজীবী ফুলগাছও লাগানো হয়েছে।

প্রকল্পটির ব্যবস্থাপক বলেন, আপনি যদি একই সময়ে সব কিছু চাষ করেন বা একই সময়ে সব রোপণ করেন, তাহলে সেটি হবে পরিবেশগত মৃত্যু। তারা (পোকামাকড়) বাঁচতে পারবে না।

আগাছা চিনে স্প্রে করবে যন্ত্র

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানি এবং সংস্থার কাছে নিজেদের গবেষণা ও শিক্ষা ছড়িয়ে দিচ্ছে ওয়াগেনিনজেন ইউনিভার্সিটির দ্য ফার্ম অফ দ্য ফিউচার। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে এবং এটি আরও টেকসই করার লক্ষ্যে প্রযুক্তির পেছনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে তারা। এর মধ্যে আগাছা চিনতে পারে, এমন প্রযুক্তিও রয়েছে।

সুক্কেল বলেন, একই ডোজ দিয়ে সব কিছু স্প্রে করার পরিবর্তে যন্ত্রটি কালচার প্ল্যান্ট থেকে আগাছা চিনতে পারে এবং তার ওপর সামান্য [জীবাণুনাশক] স্প্রে করে।

পানি থাকবে মাটির নিচে

শুষ্ক আবহাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ডাচ এ দলটি এমন একটি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা অতিরিক্ত পানি সংগ্রহ করে সেটি পাম্পের সাহায্যে মাটির নিচে পাঠিয়ে দেয়।

সুক্কেলের কথায়, শীতকালে আমাদের কাছে খুব বেশি পানি থাকে। এখানে সব পানি মাটিতে পড়ে এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থায় আটকে যায়। আমাদের মাটির নিচে একটি বড় ওয়াটার বাবল রয়েছে।

বিশাল খরচের কারণে কৃষকদের জন্য কৃষি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। যেমন- একটি বড় আলু কাটার মেশিনের দাম পাঁচ লাখ ইউরো এবং এটি ব্যবহার করা হয় বছরে মাত্র চার সপ্তাহের জন্য।

এস/ আই.কে.জে

নেদারল্যান্ডস কৃষি রোবট

খবরটি শেয়ার করুন