ছবি: সংগৃহীত
সামর্থবানদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরআন ও হাদিসে এর গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পর প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। তিনি কখনও কোরবানি পরিত্যাগ করেননি; বরং কোরবানি পরিত্যাগকারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোরবানি করল না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে।’
১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে যেসব প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক, মুকিম ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে অর্থাৎ স্বীয় হাজাতে আসলিয়্যাহ (পানাহার, বাসস্থান, উপার্জনের উপকরণ ইত্যাদি) ছাড়া অতিরিক্ত এ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, যা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমপরিমাণ (টাকার অঙ্কে আনুমানিক ৫৫ হাজার টাকা) হয়, সে ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
কোরবানির পর পশুর গোশত কি করবেন; কিংবা কত দিন ধরে তা জমা করে রেখে খাবেন। এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী? কেননা কোরবানি আল্লাহর নৈকট্য লাভে আত্মত্যাগের অনন্য ইবাদতও এটি।
কোরবানি যেহেতু আত্মত্যাগের অন্যতম ইবাদত, সেহেতু কোরবানির গোশত সম্পর্কেও রয়েছে ইসলামের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। এ সম্পর্কে অনেকেরই রয়েছে অস্পষ্ট ধারণা বা জ্ঞান। যেমন-
কেউ কেউ বলে থাকেন- ‘কুরবানির গোশত জমিয়ে রাখা যাবে না।’
আবার অনেকে বলেন- ‘কুরবানি করে গোশত সাদকা করে দিতে হয়।’
.কারও কারও ধারণা- ‘৩দিনের বেশি কোরবানির গোশত জমিয়ে রাখা যাবে না।’
কোরবানির গোশত সম্পর্কে উল্লেখিত ধারণাগুলো ভুল। কোরবানির গোশত নিজেরা খেতে পারবে, অন্যকে হাদিয়া দেয়া যাবে এবং সংরক্ষণ করা যাবে। এ ব্যাপারে হাদিসে পাকে দিক-নির্দেশনা রয়েছে-
হজরত সালামা ইবনে আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে লোক কোরবানি করেছে, সে যেন তৃতীয় দিনে এমন অবস্থায় সকাল অতিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কোরবানির গোশতের কিছু থেকে যায়।
পরবর্তী বছর সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি তেমন করব, যেমন গত বছর করেছিলাম? তখন তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন- ‘তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ। কারণ গত বছর মানুষের মধ্যে ছিল অনটন। তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমরা তাতে সহযোগিতা কর।’ (বুখারি, মুসলিম)
উল্লেখিত হাদিসে অন্যকে আহার করাও বলতে সমাজের গরিব অসহায়দের দান এবং ধনিদের উপহার দেয়া কথাই বুঝানো হয়েছে। কিন্তু কি পরিমাণ গোশত অন্যকে দান-সাদকা বা হাদিয়া দেবে সে সম্পর্কে কুরআন এবং সুন্নাহতে কোনো সুস্পষ্ট বিধান দেয়া নেই।
তবে ওলামায়ে কেরাম কোরবানির পশুর গোশত বিতরণের একটি মতামত পেশ করেছেন। আর তা হলো-
কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগ করে নিজেদের জন্য এক ভাগ রাখা; গরিব-অসহায়দের মাঝে এক ভাগ দান করা এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে এক ভাগ বণ্টন করা মোস্তাহাব।’
আরো পড়ুন: কোরবানি না দিয়ে সেই অর্থ কি দান করা যাবে?
সুতরাং ওলামায়ে কেরামের এ নির্দেশনা অনুযায়ী কোরবানির গোশত বণ্টন করা উত্তম। অতঃপর হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী দুর্ভিক্ষ কিংবা সমাজে অভাব-অনটন না থাকলে যতদিন ইচ্ছা ততদিন কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। অন্য হাদিসে এসেছে-
হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্নিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে আমরা মদিনায় ফিরে আসা পর্যন্ত কোরবানির গোশত সঞ্চয় করে রাখতাম।’ (বুখারি)
এম এইচ ডি/