প্রতীকী ছবি
দিন দিন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বাড়ছে। শহর, নগর, বন্দর, গ্রামগঞ্জ– সর্বত্র এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবহন, শিল্পেও এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার কেনার সময় এ বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখুন—
♦ কখনোই অননুমোদিত ব্যাপারী বা ডিলারের থেকে সিলিন্ডার কিনবেন না।
♦ কেনার সময় সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিন। এই তারিখ সিলিন্ডারের ওপরের দিকে দেওয়া থাকে। তার শুরুতে এ, বি, সি বা ডি এবং পরে দুটি সংখ্যা লেখা থাকে। ‘এ’ দিয়ে জানুয়ারি-মার্চ, ‘বি’ দিয়ে এপ্রিল-জুন, ‘সি’ দিয়ে জুলাই-সেপ্টেম্বর এবং ‘ডি’ দিয়ে অক্টোবর-ডিসেম্বর মাস বোঝায়। পরের দুটি সংখ্যা দিয়ে সাল বোঝায়। যেমন—‘এ২৭’ মানে ২০২৭ সালের মার্চ মাসে সিলিন্ডারটির মেয়াদ শেষ হবে।
♦ সিলিন্ডারের মুখ সিলমোহর করা বা সিল করা আছে কি না দেখে নিন। এর মানে ভেতরে পরিপূর্ণ গ্যাস আছে। সম্ভব হলে ওজন মেপে দেখুন, সিলিন্ডারের গায়ে লেখা মোট ওজন বা গ্রস ওয়েটের সঙ্গে তা মিলছে কি না।
♦ সিলিন্ডারের মুখে চাপ নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটর ব্যবহার করা হয়, যেন ব্যবহারের সময় গ্যাস পরিমিত পরিমাণে বের হয়। বাজার যাচাই করে ভালো মানের চাপ নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটর কিনুন। দাম পড়বে ০০ থেকে ৫০০ টাকা।
♦ চাপ নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটর থেকে চুলায় যে নল দিয়ে গ্যাস আসে সেটি কেনার সময় খেয়াল করুন তাতে বিএসটিআইয়ের নামাঙ্কিত আছে কি না।
এলপি গ্যাস স্থাপনের জন্য পেশাদার বা দক্ষ কারো সাহায্য নেওয়া সবচেয়ে ভালো। অন্তত প্রথমবার তেমন কাউকে দিয়ে সিলিন্ডারের সংযোগ দিন। সিলিন্ডারের সংযোগের ক্ষেত্রে নিচের ধাপগুলো মেনে চলুন—
♦ সিলমোহর খোলার পর সিলিন্ডারের মুখ থেকে রাবারের ঢাকনাটি খুলতে হবে। তার সঙ্গে লাগানো দড়িটি জোরে টান দিলে ঢাকনাটি খুলে আসে। এটি সিলিন্ডারের সঙ্গেই রেখে দেওয়া ভালো। তাহলে পরে প্রয়োজনে চাপ নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটর খুললে সিলিন্ডারের মুখে রাবারের ঢাকনাটি লাগিয়ে রাখা যাবে।
♦ সিলিন্ডারের মুখ থেকে গ্যাস বের হয় কি না পরীক্ষা করে দেখুন। সে জন্য মুখের গর্তে পানি দিয়ে দেখুন। মুখে ছিদ্র থাকলে এবং তা দিয়ে গ্যাস বের হলে বুদবুদ উঠতে থাকবে। তেমন হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারীকে জানান। তারা হয় সিলিন্ডার ঠিক করে দেবে, নইলে বদলে দেবে।
♦ এবার সিলিন্ডারের মুখে চাপ নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটর বসাতে হবে। সে জন্য আগে চাপ নিয়ন্ত্রকটি বন্ধ করে নিন। বন্ধ করতে চাপ নিয়ন্ত্রকের চাবি বা নব ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরাতে হবে। আর চালু করতে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘোরাতে হবে। এবার চাপ নিয়ন্ত্রকের নিচে থাকা রাবারের স্প্রিংটি ওপরের দিকে টেনে ধরে চাপ নিয়ন্ত্রকটি সিলিন্ডারের মুখে বসাতে হবে। ঠিকভাবে বসলে চাপ নিয়ন্ত্রকটি ধরে ওপরে টান দিলেও তা নড়াচড়া করবে না। কিন্তু যদি মনে হয় সেটি ঢিলা হয়ে আছে, তার মানে সেটি ঠিকমতো লাগেনি।
♦চাপ নিয়ন্ত্রক ঠিকভাবে লাগানো হয়ে গেলে সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। এবার রেগুলেটর আর চুলায় হোসপাইপ লাগিয়ে নিন। হোসপাইপের দুই মাথায় বাতা বা ক্ল্যাম্প ভালোমতো লাগানো হলো কি না সেটা খেয়াল করুন।
ব্যবহারের সময় নিচের বিধিগুলো মেনে চলুন—
♦ চুলা এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস খেলে। রান্নাঘরের জানালা সব সময় খোলা রাখার চেষ্টা করুন। চুলা ও তার আশপাশের জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
♦ সিলিন্ডারটি চুলা থেকে কমপক্ষে দু-তিন মিটার দূরে রাখুন। চুলার মতো সিলিন্ডার রাখার জায়গাটিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। খেয়াল রাখুন সিলিন্ডারের গায়ে যেন সরাসরি রোদ না পড়ে।
♦ সিলিন্ডার এমনভাবে রাখতে হবে, যেন চুলা অবশ্যই সিলিন্ডারের চেয়ে উঁচুতে থাকে।
♦ সিলিন্ডার সব সময় সোজাভাবে দাঁড় করিয়ে রাখবেন। কোনো অবস্থায়ই উল্টো করে, বাঁকা করে বা শুইয়ে রাখবেন না। মাটির মেঝে হলে তাতে গর্ত খুঁড়ে সিলিন্ডার রাখবেন না।
♦ চুলা জ্বালানোর আগে রান্নাঘরের জানালা খুলে দিন।
♦ ব্যবহার শেষে সিলিন্ডারের চাপ নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটর বন্ধ রাখুন। আরো সতর্ক থাকতে চাইলে চাপ নিয়ন্ত্রক বন্ধ করার পর চুলা জ্বালিয়ে হোসপাইপের ভেতরের গ্যাস পুড়িয়ে ফেলুন। গ্যাস শেষ হয়ে গেলেও চাপ নিয়ন্ত্রক বন্ধ রাখা উচিত।
♦ হোসপাইপটি নিয়মিত পরীক্ষা করুন, তাতে কোনো লিকেজ হয়েছে কি না। কখনোই দিয়াশলাইয়ের কাঠি বা লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পরীক্ষা করবেন না। ব্যবহার করুন সাবানের ফেনা। পানিতে সাবান গুলিয়ে ফেনা করে নিন। ব্রাশ দিয়ে সেই পানি পাইপের গায়ে মাখাতে থাকুন। কোথাও লিকেজ থাকলে সেখানে বুদবুদ তৈরি হবে। তেমনটা হলে দ্রুত চুলা বন্ধ করে চাপ নিয়ন্ত্রকও বন্ধ করে দিন। যত দ্রুত সম্ভব টিউব বদলে ফেলুন। তার আগে রান্নাঘরে কোনো ধরনের আগুন জ্বালাবেন না। অবস্থা গুরুতর মনে হলে বাড়ির বিদ্যুতের প্রধান চাবি বা মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন। প্রয়োজনে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা দমকল বাহিনীকে খবর দিন।
♦ খেয়াল রাখবেন ব্যবহারের সময় হোসপাইপটি গরম হয় কি না। তেমন ক্ষেত্রেও সেটি দ্রুত বদলে ফেলুন।
♦ এমনিতেও একই হোসপাইপ দুই বছরের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো।
♦ সিলিন্ডারে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে পেশাদার কারো সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
পাশাপাশি মেনে চলুন এই সাবধানতাগুলো—
হোসপাইপে কোনো কিছু পেঁচাবেন না।
সািধারণত বাসায় একমুখী বা দ্বিমুখী একটি চুলা ব্যবহার করা হয়। যদি একাধিক চুলা ব্যবহার করা হয়, তাহলে প্রতিটির জন্য পৃথক সিলিন্ডার ব্যবহার করাই উত্তম।
সিলিন্ডারের আশপাশে মোবাইল ফোন, ক্যামেরা বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করবেন না।
খেয়াল রাখবেন, সিলিন্ডারটি যেন আপনার শিশুর নাগালের বাইরে থাকে।
সিলিন্ডার খোলা জায়গায় রাখুন, যাতে যেকোনো দুর্ঘটনার মুহূর্তে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়।
ওআ/
খবরটি শেয়ার করুন