সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনের গোয়েন্দা সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৭:৪৪ অপরাহ্ন, ১৮ই জুন ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরে দ্বিতীয়বারের মতো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা গুপ্তচরবৃত্তির উদ্বেগ এতোটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে তা মার্কিন শীর্ষ কূটনৈতিকের চীনা সফরের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে। মূলত দুই পরাশক্তি একে অপরের সাথে সম্পর্কের উন্নতি চাইলেও তারা আর একে অপরকে বিশ্বাস করে না।

গুপ্তচর বেলুন ঘটনার পর ব্লিঙ্কেনের চীন সফর স্থগিত করা হলেও পাঁচ মাস পর চীন সফরে গেলেন ব্লিঙ্কেন।

এমতাবস্থায় চীনের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে অপর একটি চাঞ্চল্যকর বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, চীন কিউবা দ্বীপ থেকে গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে ব্লিঙ্কেন জানান ২০১৯ সালেই চীন তার গুপ্তচরবৃত্তির ধারার উন্নয়ন ঘটিয়েছে।

সিআইএ ডিরেক্টর বিল বার্নস মে মাসে গোপনে চীনা সফরে যান এবং সেখানকার কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন। তিনি গোয়েন্দা পর্যায়ে যোগাযোগ খোলা রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাদের সাথে আলাপ করেন।

মূলত ১৯৭৯ সালের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয় বলে জানান এশিয়ার সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর চায়না অ্যানালাইসিসের সিনিয়র ফেলো, লাইল মরিস। 

দুই দেশের মধ্যকার যোগাযোগহীনতার ফলে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ককে আরো জটিল করে তোলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন তার নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা প্রসারিত করে চলেছে। যার ফলে কোথাও না কোথাও গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সংঘাত বেড়ে চলেছে।

সাবেক সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) চীনা বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার জনসন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দুইটি দেশ একে অপরের উপর গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে আসছে।

এ গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রে দুইদেশই সম্পৃক্ত থাকলেও চীনের পক্ষ থেকেই সম্পৃক্ততা খানিক বেশি। এর ফলে পূর্বের তুলনায় এদেশ অধিক ধনী ও প্রভাবশালী হয়েছে।

চীনের নেতা শি জিনপিংও গত এক দশকের বেশি ক্ষমতায় থাকাকালীন তার পূর্বসূরিদের চেয়ে অনেক বেশি দৃঢ় পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গিলফোর্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জুয়েঝি গুওর মতে, গোয়েন্দা সক্ষমতা বাড়ানো, প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় উন্নত করার উপর ধারাবাহিক জোর দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের প্রধান গোয়েন্দা কার্যক্রম পিপলস লিবারেশন আর্মি এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় (এমএসএস) শিয়ের অধীনস্থ। 

১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত, এমএসএস চীন এবং চীনের বাইরের দেশগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তি তত্ত্বাবধান করে। তবে চীনভিত্তিক এমএসএস এর কার্যক্রম অত্যন্ত গোপনীয়। কোন ধরনের ওয়েবসাইট থেকেও এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায় না।

গুও বলেন, দেশে এবং বিদেশে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মধ্যে আগামী বছরগুলোতে সংস্থাটি চীনের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতায় আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব উভয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিউবায় চীনের কিউবায় বা বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় নজরদারি সুবিধা স্থাপন বা সম্প্রসারণ করাও মোটেও অবাক করার মতো বিষয় নয়। অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের মূল লক্ষ্য, তবে একমাত্র লক্ষ্য নয়।

এদিকে, চীনে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

শি তার ক্ষমতাকে ইতিমধ্যেই সুসংহত করেছেন এবং নিরাপত্তার প্রতি ক্রমবর্ধমানভাবে মনোযোগীও হয়েছেন - যার মধ্যে রয়েছে অনলাইনে এবং চীনের ব্যাপক নজরদারি পরিকাঠামোর মাধ্যমে তার নাগরিকদের পর্যবেক্ষণ করার জন্য রাষ্ট্রের ক্ষমতা তৈরি করা।

আরো পড়ুন: চীন সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন

চীনে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজটি আগের চেয়ে কঠিন এবং আগের চেয়ে আরও বেশি প্রয়োজনীয় বলে জানান জনসন।

বিশেষজ্ঞরা চীনের ইউনাইটেড ফ্রন্টের মতো গুপ্তচরবৃত্তির প্রচেষ্টা এবং অপারেশনগুলোর প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ বা এর সম্ভাব্যতা সম্পর্কে উদ্বেগ এবং সচেতনতা পরিলক্ষিত হয়।

ফলে চীনা টেলিকম সরঞ্জাম এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।

চীন বারবার বলেছে যে তারা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে এবং টিকটক উভয়ই গুপ্তচরবৃত্তি সম্পর্কে অভিযোগগুলো বারবার অস্বীকার করেছে।

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ওপেন সোর্স ডেটা ব্যবহার করে ২০০০ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত ২২৪ টি চীনা গুপ্তচরবৃত্তির তথ্য প্রকাশ করে।

গত মাসে, বেইজিং একটি জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি থেকে "এম্পায়ার অফ হ্যাকিং: ইউএস সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি" শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ১৯৮০-এর দশকে গুপ্তচরবৃত্তি চালাতে ইন্টারনেটকে ব্যবহারের জন্য অভিযুক্ত করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট সরঞ্জাম এবং সফ্টওয়্যার পণ্যগুলো ব্যবহার করে এমন সংস্থা, উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তিরা সিআইএ কে হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহার করে এবং সারাবিশ্বে গুপ্তচরবৃত্তি চালানোর মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে।

যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মাসে আবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আঙুল তুলেন। 

এই মাসের শুরুর দিকে, চীনা মন্ত্রণালয় গত বছর চীনের উপর গুপ্তচরবৃত্তি চালানোর জন্য ৮০০ টিরও বেশি বিমান পাঠানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করে - যদিও বিমানগুলো চীনা আকাশসীমা অতিক্রম করেছে কি না এ বিষয়ে কোনও দাবি করা হয় নি।

দক্ষিণ চীন সাগরের উপর আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় একটি চীনা ফাইটার জেট মার্কিন গুপ্তচর বিমানকে বাধা দেওয়ার পর প্রতিটি দেশের সামরিক বাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করছে বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চীনা মন্ত্রণালয় এ নিন্দা জানায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে এ দুই দেশের একে অপরের বিরুদ্ধে এমন কথাবার্তা চলতেই থাকবে এবং তাদের মধ্যকার প্রতিযোগিতামূলক ভাবনার ফলেই তাদের মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তি দেখা দেয়।


এসি/আইকেজে 



চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

খবরটি শেয়ার করুন