ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
ইসরাইলের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেই দ্বন্দ্ব এতদিন ভেতরে ভেতরে চললেও এবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ফলে গাজা উপত্যকায় বিরামহীন বিমান হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের পাশাপাশি নিজ দেশেই কঠিন চাপের মুখে পড়েছেন ইসরাইলের এই নেতা।
পবিত্র আল আকসা মসজিদের মর্যাদাহানি ও ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও নিপীড়নের জবাবে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস।
ইসরাইলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চোখ ফাঁকি দিয়ে গাজা সীমান্ত পেরিয়ে স্থল, সমুদ্র ও আকাশ-তিন দিক দিয়ে চালানো হয় এই হামলা। যাতে তিন শতাধিক ইসরাইলি সেনাসহ ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে দুই শতাধিক ইসরাইলি নাগরিককে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
এই হামলাকে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর গত সাত দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। যা নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি নেতারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান। হামাসের ওই হামলার পরই গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ নেতানিয়াহু।
এরপর গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় নির্বিচার বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক হতাহত হলেও হামাস যোদ্ধারা কার্যত ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে।
হামাসের ওই অতর্কিত অভিযানের পরই মূলত ইসরাইলি সরকার ও প্রশাসনে ব্যাপক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ইসরাইলি জনগণ ও বিরোধী রাজনীতিকরা এই হামলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকেই দায়ী করছেন। কিন্তু দায় নিতে অস্বীকার করছেন নেতানিয়াহু। তিনি এই হামলার জন্য দোষ চাপাচ্ছেন সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ওপর।
হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটকে দায়ী করে প্রকাশ্য মন্তব্যও করেছেন নেতানিয়াহু। হামলার তিন সপ্তাহের মাতায় রোববার (২৯ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেয়া পোস্টে গোয়েন্দা প্রধানদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা তাকে কখনই সতর্ক করেনি যে হামাস ৭ অক্টোবরে বড় আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। খবর বার্তাসংস্থা রয়টার্সের।
গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে নেতানিয়াহুর এই মন্তব্যের পর বিরোধীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে পাল্টা তোপ দেগেছেন বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেন, ইসরাইলি সেনা ও কমান্ডাররা যখন হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করছে, তিনি (নেতানিয়াহু) তখন সমর্থনের পরিবর্তে তাদের ওপর দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন।
বিরোধী দলীয় নেতা আরও বলেন, এই দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা এবং নিরাপত্তা সংস্থার ওপর দোষ চাপানো সেনাবাহিনীকে আরও দুর্বল করছে। তাই নেতানিয়াহুকে তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।’ ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্তজ বলেছেন, ‘নেতানিয়াহুকে বিবৃতি প্রত্যাহার করতে হবে।’
যদিও সরকার ও বিরোধীদের এই চাপের মুখে নেতানিয়াহু তার এক্স পোস্ট সরিয়ে নিয়েছেন এবং সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে নিজের মন্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন। তবে এতে তার শেষরক্ষা হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এসকে/
খবরটি শেয়ার করুন