সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রিয়, আমার ঠিকানায় একটা খাম পাঠিও, একটা নীল খাম শুধু!

সাহিত্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:৪০ অপরাহ্ন, ১১ই নভেম্বর ২০২৩

#

প্রিয়,

ভালো থাকা নিয়ে অনাবশ্যক কোনো প্রশ্ন আজ নাই-বা করি। প্রত্যুত্তরে ইদানীংকালের ভয়াবহ মিথ্যেটা আমরা অনায়াসে চালিয়ে দিই অভ্যাসে-অনাভ্যাসে তাই না?

আমরা জানি, আমরা কেউ ভালো নেই। হৃদয়ে ক্ষরণ, মস্তিষ্কে স্মৃতি, দৃষ্টিতে ক্ষণে ক্ষণে হ্যালোসিনেট নিয়ে কতদিন মানুষ স্বস্তিতে বাঁচতে পারে!--বলো!!

বড্ড জ্বালাময়ী জীবনটায় মাঝে-মাঝে কেমন বিদ্রোহের দাহতাপে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকি। তবুও বেঁচে থাকার দায়ে ওষ্ঠে মাখিয়ে রাখি মেকি হাসি। আহ! কী সব দিন ছিল! কী সব দিন ছিল! স্বপ্ন আর আকুলতায় ভরা!

এই যান্ত্রিকতাবাদ যেদিন থেকে হানা দিলো, আমাদের চিঠি লেখার অভ্যাসটা কেমন মিইয়ে গেলো! টুংটাং মেসেঞ্জারে। এক-দুই বাক্যের প্রশ্ন আবার সাথে সাথে তার উত্তর। 

মাঝে-মাঝে মনে হয় একজন কড়া গার্ডের প্রহরায় বসে কোনো এক বোর্ড পরীক্ষার খাতায় লিখছি। আবেগ নেই, ভালোবাসা, উচ্ছ্বাস কিছুই নেই। ভাবো তো, সেই একটা চিঠির একটা লাইন হতো তখন পুরো একটা সোনালী বিকেলের গল্প।

একটা শব্দে-বাক্যে পুরো একটা গ্রাম কিংবা পুরো একটা নদীর গল্পও তৈরি হয়ে যেতো! একটা নীল খাম এলে মনে হতো আজ পুরো আকাশটাই আমার হাতের মুঠোয়! সত্যি, কী নির্মল পরিচ্ছন্ন ভালোবাসারা উড়ে বেড়াতো প্রজাপতির মতন, আর প্রজাপতি ধরার লোভে দিনভর ছোটাছুটির মতো কত সহস্র প্রহর কেটে যেতো! তার কোনো হিসেব রাখার দায় ছিল না কারোরই। 

তোমার মনে পড়ে? অশোক ফুলের রঙটা শুধু জানতাম, সেও বই পড়ে। কিন্তু ফুলটা চিনতাম না! আর তুমি কেমন পাগল ছিলে! সত্যি সত্যিই তুমি একদিন ডালসহ এক গুচ্ছ অশোক ফুল আমাকে দিয়ে চমকে দিয়েছিলে। আর এই ফুলের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তোমার বিশাল এক লেকচার--হা হা হা--

আমি সোনালু ফুলের আদর মাখানো রঙটার প্রেমে পড়েছিলাম বলে, আমার বাড়ির আঙ্গিনায় একেবারে একটা শেকড়শুদ্ধ গাছ এনে দিলে! আর আমি তোমার এসব পাগলামি বুনে বুনে কত জাল বুনে গেছি।

এতটুকুও মনে হয়নি কোনোদিন, তুমি কিংবা আমি কোনোদিন হারিয়ে যেতে পারি। তুমি বলতেকাঁচের চুড়িগুলো আলতোভাবে ধরো, কখনোই ভাঙবে না। আসলেই কি সত্যি! কাঁচের চুড়িতো ভাঙবেই।

তোমাকে ভাবি আর মনে মনে প্রশ্ন করি, আমাদের মধ্যে আমরা কে ছিলাম কাঁচের চুড়ির মতন? তুমি না আমি? উত্তরটা আজও খুঁজি। যদি পেয়ে থাকো উত্তর দিয়ো না, শুধু একটা নীল খাম আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিও। 

মনের ভেতর অব্যক্ত কথাগুলো আরেকবার সাজিয়ে লিখতে ইচ্ছে করছে ভীষণ! ভালো থেকো। তোমার দেয়া সেই নাম, আচ্ছা মনে আছে তো! তবে, খামের উপর সেই নাম আর আমার ঠিকানায় একটা খাম পাঠিও। একটা নীল খাম শুধু।

——ইতি

রাফিয়া জয়নব

চট্টগ্রাম

আরো পড়ুন : প্রিয় চিরচেনা আগন্তুক, তোমার চোখে স্পষ্ট ভালোবাসা দেখতে পাই

এস/ আই. কে. জে/ 

 


চিঠি প্রিয় নীল চুড়ি

খবরটি শেয়ার করুন