শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের বিরুদ্ধে গিয়ে একা হয়ে পড়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:২৪ পূর্বাহ্ন, ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

সম্প্রতি খালিস্তানপন্থী নিজ্জারের কথিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারতকে দায়ী করে রোষের মুখে পড়েন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ভারত এ হত্যাসম্পর্কিত সব ধরনের অভিযোগ ইতিমধ্যে অস্বীকার করেছে।

নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ট্রুডো জানান, তিনি কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে নন। এমনকি ভারতের জন্য কোনও ধরনের সমস্যা সৃষ্টি তিনি করতে চান না। 

ভারতের জনসংখ্যা কানাডার চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি নিয়ে দেশটি কানাডাকে সমানভাবে টক্কর দিয়ে গেছে সবসময়ই।

তবে বিপত্তি বাঁধে ট্রুডোর বক্তব্যের পরেই। এমনকি তার এ বিস্ফোরক মন্তব্যের পর, ফাইভ আইস জোটের তার সহযোগীরা পর্যন্ত তার সাথে একমত হতে পারেনি।

যদিও যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া তার মন্তব্যের প্রতিবাদও করেনি এবং সহমতও পোষণ করেনি। এ দুটি দেশ চতুরতার সাথে এ বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র উদ্বেগ প্রকাশ করে।

অন্যদিকে কানাডার মিত্রপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে নীরবতা পালন করে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নতুন অর্থনৈতিক পথ প্রতিষ্ঠা করায় ভারতের প্রশংসা করতে দেখা যায়।

মূলত ভারতের বর্তমান কূটনৈতিক অবস্থানের কারণেই পিছিয়ে পড়ছে কানাডা। কেউই প্রকাশ্যে ভারতের সমালোচনা করতে প্রস্তুত নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সমস্ত পশ্চিমা বিশ্ব চীনের প্রভাব কমাতে চীনের বিপরীতে ভারতকেই দেখছে। আর তাই তারা ভারতকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে আগ্রহী। এমন পরিস্থিতিতে কানাডার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। 

দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের খাতিরেও তারা কানাডার পক্ষে এসে দাঁড়ায়নি। এটাই হয়তো ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা। কানাডায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন জানান, ফাইভ আইসের সদস্যরা এ বিষয়ে তদন্ত করছেন। কিন্তু এ হত্যার প্রকাশ্যে নিন্দা করার বিষয়ে কানাডার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা।

তবে এ নীরবতা বিশ্বমঞ্চে কানাডার ত্রুটিগুলোকেও চোখে আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে দেয়। কানাডা নির্ভরযোগ্য পশ্চিমা মিত্রদেশ হওয়া সত্ত্বেও বৈশ্বিক শক্তি অর্জনে এদেশ ভারত থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

ট্রুডো যে পর্যাপ্ত প্রমাণ ছাড়াই ভারতের সমালোচনা করে নিজেরই বিপদ ডেকে এনেছেন, তা হয়তো এখন তিনি বুঝতে পারছেন। তার এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদস্বরূপ ভারতে কানাডিয়ানদের জন্য সমস্ত ভিসা পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে কানাডা যখন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ সুদের হারের সাথে লড়াই করছে, এসময় কানাডার নির্বাচনে চীনের হস্তক্ষেপের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সমালোচকদের মতে, চীনা হস্তক্ষেপ সম্পর্কে ট্রুডো এবং তার মন্ত্রিসভা জ্ঞাত ছিলেন, তবুও তারা এ বিষয়ে কোনও ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

তারপর জানা যায়, কানাডার সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার পল বার্নার্ডোকে মাঝারি মানের নিরাপত্তাব্যবস্থা সংবলিত কারাগারে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে, যা জনরোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিগত তিন বছরের মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসেই জনগণ ট্রুডোর প্রতি তাদের তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। ২০১৫ সালে নির্বাচিত হওয়া এ রাষ্ট্রপ্রধানের উপর ৬৩% কানাডিয়ান তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়টিও ট্রুডোর জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয়। ট্রুডো দীর্ঘ আট বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি কানাডার রাজনৈতিক ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তেই দেখা যাচ্ছে।

আই.কে.জে/

ভারত কানাডা

খবরটি শেয়ার করুন