সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে উত্তর কোরিয়ার সমর্থনে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:০৬ অপরাহ্ন, ৫ই আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা হচ্ছে বলে দাবি করা চীন আদতে সত্য গোপন করে চলেছে। সম্প্রতি সিপিসি পলিটব্যুরোর সদস্য লি হংঝং এর নেতৃত্বে চীনা প্রতিনিধিদল উত্তর কোরিয়ার একটি কুচকাওয়াজে অংশ নেয়। এ কুচকাওয়াজে দুইটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়, যা মূলত জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন। 

এ ব্যাপারে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, গত ২৭ জুলাই উত্তর কোরিয়ার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে চীনা প্রতিনিধিদল অংশ নিলেও তারা সবসময়ই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলেছেন। এ কুচকাওয়াজে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনের ব্যাপার নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

কোরীয় উপদ্বীপ নিয়ে তুমুল উত্তেজনার মধ্যে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর কোরিয়া। চলতি বছরেই বেশ কয়েকটি অস্ত্রপরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি।

চীন ও রাশিয়ার সমর্থনে গৃহীত ইউএনএসসি রেজুলেশনের অধীনে পারমাণবিকভাবে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়ার প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা বিস্ফোরণ চালানোর পর ইউএনএসসি দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তারপর থেকে, কয়েক বছর ধরে ইউএনএসসি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ১০ টি নিষেধাজ্ঞা পাস করেছে- এবং এ সবই চীন ও রাশিয়ার সমর্থনে হয়েছে।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, উত্তর কোরিয়ার উপর চীন ও রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞার ফলে মূলত উত্তর কোরিয়া আরও নির্বিঘ্নে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে চীন নিজেকে দায়িত্বশীল আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে দাবি করে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তির উপর গভীর আগ্রহ দেখাচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার এ বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে রাশিয়াও তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে পাঠিয়েছিল।

উভয় দেশের রাষ্ট্রদূতেরাই নিজ নিজ রাষ্ট্রপতির পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তা উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের কাছে পৌঁছে দেন। এমনকি তারা উত্তর কোরিয়ার এই একনায়কের সাথে হাসিমুখে ছবিও তুলেন। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ও চীন তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমেই উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন জানাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ বা সমগ্র বিশ্ব চীনকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করুক। তিনি সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের শত্রু ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে শান্তি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছেন। তিনি উপদ্বীপে দুই কোরিয়ার মধ্যে শত্রুতার অবসানের বিনিময়ে চীনের জন্য বিশ্ব নেতৃত্ব চান।

অন্যদিকে চীন চায় উত্তর কোরিয়া কোরীয় উপদ্বীপকে উত্তেজিত রাখুক এবং এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া চিন্তিত থাকুক। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাইওয়ানের উপর সামরিক আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অনুযায়ী তারা চায় চীন একটি মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বজায় রেখে নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা মেনে চলুক। যেকোন ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটলে, চীন সাগর অবরুদ্ধ করতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। এ সাগরই বার্ষিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা দেয়। কিন্তু চীন সমগ্র দক্ষিণ চীন সাগরকে তার সংরক্ষিত এলাকা হিসেবেই দেখে এবং চায় না যুক্তরাষ্ট্র, কোয়াড বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক শক্তি এই এলাকায় তাদের সামরিক উপস্থিতি প্রদর্শিত করুক।

আরো পড়ুন: জোরপূর্বক শ্রম অনুশীলনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ দুটি চীনা কোম্পানি

গত ১০ বছরে, চীন তার সশস্ত্র বাহিনিকে আধুনিক করেছে। বর্তমানে বহরের আকারের দিক দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম নৌবাহিনী রয়েছে চীনের। তাছাড়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপারেশনাল এয়ারফোর্স রয়েছে চীনের।

তবে এতকিছুর পরেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অংশীদারদের সত্যিই চ্যালেঞ্জ করার জন্য চীনের এখনও সামরিক অভাব রয়েছে। ১৯৭৯ সালের পর চীন কোন বিশেষ যুদ্ধও লড়েনি।

চীনের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার্থে দেশটি চায় উত্তর কোরিয়া যেন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে এবং মহড়া চালিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতেও, উত্তর কোরিয়ার প্রতি চীনের সমর্থন ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে।

এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/ 

চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া

খবরটি শেয়ার করুন