সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যশোরে প্রথম ‘হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ’ আইনে মামলা, আসামি ওসিসহ ৪ জন

ডেস্ক নিউজ

🕒 প্রকাশ: ১০:০০ অপরাহ্ন, ২৭শে জুন ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

যশোরের আদালতে ‘হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ’ আইনে প্রথম মামলা হয়েছে। অবৈধভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে নেওয়ার অভিযোগে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ইউপি চেয়ারম্যান ও খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলার তেলিধান্যপুড়া গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল হাই সোমবার (২৬ জুন) যশোর আদালতে মামলাটি করেন।

‘হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ’ আইনে প্রথম করা মামলায় বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অবন্তিকা রায় সিভিল সার্জনকে নির্যাতনের চিহ্ন উল্লেখ পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল এবং পুলিশ সুপারকে মামলা গ্রহণপূর্বক আদালতকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী মীর্জা সাহেদ আলী চঞ্চল।

মামলার আসামিরা হলেন- বাঘারপাড়া থানার ওসি শাহাদৎ হোসেন, খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই অভিজিৎ সিংহ রায়, বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান ও ফরিদপুরের সদরপুর গ্রামের মৃত হাজী রোকনুদ্দিন শরীফের ছেলে সরওয়ার শরীফ।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদী বৃদ্ধ আব্দুল হাই এজমা, মেরুদণ্ড, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের রোগী। ২১ জুন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আব্দুল হাইয়ের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানান, বাঘারপাড়া থানার ওসি তাকে বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের দ্রুত গিয়ে দেখা করতে বলেছেন। এরপর আব্দুল হাই বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখেন চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান, ওসি শাহাদৎ হোসেন, খাজুরা ক্যাম্পের এসআই অভিজিৎ রায় এবং অপরিচিত এক ব্যক্তি সেখানে বসে আছেন।

ওসির আত্মীয় সারওয়ার শরীফ আব্দুল হাইয়ের ছেলে ইফতেখারের কাছে ৫ লাখ টাকা পাবে বলে তাৎক্ষণিক টাকা পরিশোধ করতে বলেন। এর মধ্যে ওসি ও এসআই অভিজিৎ ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়া হবে বলে হুমকি দিতে থাকেন। একইসঙ্গে তারা আব্দুল হাইকে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করেন এবং তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন। পাশাপাশি চেয়ারম্যানের প্যাডে আগে থেকেই লেখা ‘আব্দুল হাইয়ের ছেলে ইফতেখারের কাছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা পাবে’ বলে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করেন। ওই অঙ্গীকারনামায় লেখা ছিল ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ না করলে আব্দুল হাই ও তার ছেলে ইফতেখারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।

আরো পড়ুন: যশোরের রাজাকার আমজাদ মোল্লাসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

বাদীর অভিযোগ, আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে হেফাজতে মৃত্যু নিশ্চিত এবং টাকা আদায়ের জন্য অপকৌশল অবলম্বন করে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বাড়ি এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মুশফিকুর রহমানের চিকিৎসা নেন। বিষয়টি তিনি সাক্ষীদের জানিয়ে আদালতে মামলাটি করেছেন। হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন ২০১৩ এ যশোর আদালতের এটি প্রথম মামলা।

বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দ্বারা বাদী আব্দুল হাইয়ের দেহে নির্যাতন এবং জখমের চিহ্ন পরীক্ষা পূর্বক সম্ভাব্য সময় উল্লেখ পূর্বক রিপোর্ট প্রস্তুতের জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি সেই প্রতিবেদনের কপি অভিযোগকারী অথবা তার মনোনীত ব্যক্তিকে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এছাড়া নির্যাতনের ঘটনার পর তার কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সিভিল সার্জনের প্রতিবেদন অনতিবিলম্বে পুলিশ সুপারকে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। প্রতিবেদন পেয়ে পুলিশ সুপার হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা রুজু করে আদালতকে জানাবেন বলে আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এসি/আইকেজে 


যশোর ‘হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ’

খবরটি শেয়ার করুন