ছবি: সংগৃহীত
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই হয়ে উঠেছিলেন শ্রীদেবী, মাধুরী দীক্ষিতের চেয়ে বড় তারকা। তিন বছরে দিয়েছিলেন ১৩টি হিট সিনেমা। কিন্তু ১৯ বছর বয়সেই অকালমৃত্যুতে ইতি ঘটে তার সফল যাত্রার। সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্ব দিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের মন জিতে নিয়েছিলেন তিনি। এই অভিনেত্রীর নাম দিব্যা ভারতী।
চলচ্চিত্রে তার অভিষেক তেলুগু ছবি 'বব্বিলি রাজা'য় (১৯৯০) ভেঙ্কটেশের বিপরীতে। এরপর 'বিশ্বাত্মা' (১৯৯২) দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয় তার।
দিব্যা ভারতীর জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি, মুম্বাইয়ে। তার বাবা ছিলেন বিমা কর্মকর্তা, মা গৃহিণী। ১৪ বছর বয়স থেকেই অভিনয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে তার কাছে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর আসেন অভিনয় জগতে।
অভিষেকের কয়েক মাসের মধ্যেই ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ অভিনেত্রীতে পরিণত হন দিব্যা ভারতী। অভিনয় করেন 'শোলা অউর শবনম', 'দিওয়ানা', 'বলবান'-এর মতো সুপারহিট সব ছবিতে অভিনয় করেন।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই শাহরুখ খান, সুনীল শেঠির মতো সুপারস্টারদের সঙ্গে কাজ করেন দিব্যা ভারতী। ১৯৯৩ সালের শুরুতেই দিব্যা ভারতীর জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে প্রযোজক-পরিচালকরা তাকে ছবিতে কাজ করানোর জন্য লাইন দিতেন।
ওই সময় এই অভিনেত্রী ছবিপ্রতি ৫০ লাখ রুপির বেশি পারিশ্রমিক নিতেন। এর মাধ্যমে তিনি সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীদের একজনে পরিণত হন।
টিনেজের সাফল্য ও খ্যাতিতে মাধুরী দীক্ষিত ও শ্রীদেবীর মতো সুপারস্টারদের পেছনে ফেলে দেন দিব্যা ভারতী।
'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে' ছবিতে সিমরান চরিত্রের জন্য পরিচালক আদিত্য চোপড়ার প্রথম পছন্দ ছিলেন দিব্যা।
অল্প সময়ে দিব্যা এমন এক রেকর্ড গড়েন, যা ৩১ বছর পরও কেউ ভাঙতে পারেনি। ক্ষণস্থায়ী ক্যারিয়ারে এ অভিনেত্রী ২০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে ১৪টি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি, যা যে কোনো নবাগতের জন্য রেকর্ড।
মৃত্যুকালে তিনি ১২টি অসমাপ্ত চলচ্চিত্র রেখে যান। সেই ছবিগুলোর কাজ পরে শ্রীদেবী ও করিশ্মা কাপুরসহ অন্যান্য অভিনেত্রীদের দিয়ে শেষ করা হয়।
আরও পড়ুন: জার্মান টিকটকার নোয়েলের সঙ্গে ঢাকার সড়কে নাচলেন হৃদি
১৮ বছর বয়সে দিব্যা ভারতীর পরিচয় হয় পরিচালক-প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার সঙ্গে। ১৯৯২ সালে সাজিদকে বিয়ে করেন তিনি।
ক্যারিয়ার যখন তরতর করে এগোচ্ছিল, তখনই করুণ পরিণতি বরণ করেন দিব্যা ভারতী। মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের একটি ভবনের পঞ্চমতলা থেকে পড়ে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তার।
দিব্যা ভারতীর মৃত্যু নিয়ে নানা গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চাউর হয়। মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ বলা হয়, মাথায় আঘাত ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণকে। তবে তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে আজও রহস্য রয়ে গেছে। ১৯৯৩ সালের ৭ই এপ্রিল মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লে শ্মশানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
মৃত্যুর সময় দিব্যা ভারতীর অনেকগুলো ছবির কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম 'লাডলা' (তার বদলে শ্রীদেবী অভিনয় করেন), 'দিলওয়ালে', অক্ষয় কুমারের 'মোহরা', অজয় দেবগনের 'বিজয়পথ'।
দিব্যার জীবদ্দশায় মুক্তি পাওয়া শেষ ছবি ছিল 'ক্ষত্রিয়'। এ ছবি মুক্তির এক সপ্তাহ পরই তিনি মারা যান।
প্রয়াত এই অভিনেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জীবনের ওপর ভিত্তি করে 'লাভ বিহাইন্ড দ্য বর্ডার' নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছবিটি শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায়। এছাড়া ২০১১ সালে 'চার্জশিট' নামে একটি ছবি নির্মাণ করেন বলিউড কিংবদন্তি দেব আনন্দ। এ ছবির কাহিনি কিছুটা দিব্যা ভারতীর মৃত্যু ও মৃত্যুরহস্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত।
সূত্র:ইন্ডিয়া টুডে
এসি/ আই.কে.জে/