ছবি - সংগৃহীত
ভোটার হওয়ার বয়স কমিয়ে ১৭ বছর নির্ধারণ করা উচিত বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভিমত জানালেও এতে রাজি নয় রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপির শঙ্কা, এতে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। জামায়াতে ইসলামীও একই ধারণা পোষণ করে। জাতীয় নাগরিক কমিটি এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান জানায়নি।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছিলেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর নির্ধারণের চিন্তা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। নাগরিক কমিটি প্রস্তাব করেছে, ভোটার হওয়ার যোগ্যরাই প্রার্থী হতে পারবেন।
বিবিএস ও নির্বাচন কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোটারের বয়স ১৭ নির্ধারণ করলে ৩০ লাখের বেশি তরুণ ভোটার হওয়ার যোগ্য হবেন। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষদিকে নির্বাচন হলে আরও ৬০ লাখের বেশি তরুণ যোগ হবেন ভোটার তালিকায়। বয়স কমিয়ে ১৭ করা হলে প্রায় এক কোটি নতুন ভোটার যোগ হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে।
অন্যান্য দেশে ভোটারের বয়স কত?
জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সীরা শিশু। তাই যেসব দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, এর অধিকাংশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮। কিছু দেশে তা ২০ থেকে ২৫ বছর। তবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় তা ১৬। আর্জেন্টিনায় ১৫ বছর বয়সীরাও প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট দিতে পারে, যদি নির্বাচনের সময় ১৬ বছরে উত্তীর্ণ হয়।
যুক্তরাজ্যের চার দেশ– ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসে ভোটের বয়স ১৮। তবে স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রাদেশিক ও স্থানীয় নির্বাচনে ১৬ বছর বয়সীরা ভোট দিতে পারে। জার্মানিতে প্রাদেশিক ও স্থানীয় নির্বাচনেও একই বয়সীরা ভোট দিতে পারে।
গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর কোরিয়া, নেপাল, সুদান, পূর্ব তিমুরে ভোটের বয়স ১৭ বছর। বসনিয়া ও সার্বিয়ায় কর্মজীবী হলে ১৬ বছর বয়সীরাও ভোট দিতে পারে। কিউবা, ইকুয়েডর, মাল্টায় ভোটের বয়স ১৬।
কে কী বলছেন
গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করা উচিত। নির্বাচন সংস্কার কমিশন কী সুপারিশ করবে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে, ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য আমি তা মেনে নেব।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘এটা করতে গিয়ে আরও সময় যাবে, আরও সময়ক্ষেপণ হবে, আরও বিলম্ব হবে। মানুষের মধ্যে ধারণা হচ্ছে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।’
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ‘জনমনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন তাহলে কী করতে হবে? নতুন করে আবার ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। আমি মনে করি, এ বিষয়কে এভাবে না বলে, এ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে তার পর এ বিষয়টি আনতে পারলে ভালো হতো; কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সরকারের প্রধান নির্বাহী; তিনি বলে দিচ্ছেন, ১৭ বছর হলে ভালো। যদি এক বছর কমাতে চান, তাহলে সেটা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব করুক। প্রধান উপদেষ্টা যখন বলে দেন, তখন চাপ তৈরি হয় নির্বাচন কমিশনের জন্য।
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, ভোটের বয়স কমানোর চিন্তায় অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি হবে। এতে চলমান অস্থিরতা বাড়াবে। তবে এ নিয়ে কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানায়নি। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অভিমত দিয়েছেন মাত্র। তিনি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাব দেবেন, তখন জামায়াত প্রতিক্রিয়া জানাবে।
আই.কে.জে/