ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সার্জিও গোরকে ভারতের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ৩৮ বছর বয়সী গোর শুধু ভারতের সঙ্গেই নয়, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গেও আমেরিকার সম্পর্ক দেখবেন। এ নিয়োগকে ট্রাম্প ‘একজন মহান বন্ধুকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব’ দেওয়ার ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। খবর বিবিসির।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্জিও গোর দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলে রয়েছেন। তিনি ট্রাম্পের লেখা বই প্রকাশ করেছেন, ২০২৪ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থ সংগ্রহে বড় ভূমিকা রেখেছেন এবং ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের বিশ্বস্ত সহযোগীদের নিয়োগে সহায়তা করেছেন। তবে তার কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা সীমিত।
গোরের অতীত জীবনও বহুমাত্রিক—উজবেকিস্তানে জন্ম হলেও শৈশব কেটেছে মাল্টায়। ১২ বছর বয়সে তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমান। রিপাবলিকান রাজনীতির সঙ্গে স্কুল–কলেজ থেকে তার সম্পৃক্ততা।
এদিকে গোরের নিয়োগকে ঘিরে দিল্লি ও কূটনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদূত করা হলে সরাসরি হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে; অন্যদিকে সমালোচকেরা বলছেন, ভারত–আমেরিকা সম্পর্কের মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কূটনীতিক না পাঠিয়ে একজন রাজনৈতিক অনুগতকে পাঠানো ভারতের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের শামিল।
আরও একটি বড় প্রশ্ন উঠেছে, কেন গোরকে একই সঙ্গে পাকিস্তান ও দক্ষিণ–মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশও দেখার দায়িত্ব দেওয়া হলো। বিশ্লেষকদের মতে, এতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড় করানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা দিল্লি বরাবরই এড়াতে চায়। আমেরিকার কৌশলগত বিশেষজ্ঞ অ্যালিসা আয়রেস বলেন, ভারত সাধারণত পাকিস্তানের সঙ্গে নিজেকে একই ফ্রেমে দেখতে চায় না।
২০০৯ সালে ওবামা প্রশাসনের সময় রিচার্ড হোলব্রুককে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতের বিশেষ দূত করার প্রস্তাব দিল্লি দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করেছিল। এবারও অনুরূপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে ভারত–আমেরিকা সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে। একদিকে ভারতীয় পণ্যে কড়া শুল্কনীতি আরোপ, আবার ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত অবসানে ভূমিকা রেখেছেন—ট্রাম্পের এমন দাবিকে ভারত প্রকাশ্যে অস্বীকার করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে গোরের আগমন নতুন অধ্যায় সূচনা করবে নাকি আরও অস্বস্তি সৃষ্টি করবে, তা সময়ই বলে দেবে।
তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—ট্রাম্পের সঙ্গে গোরের ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য একই সঙ্গে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তার কূটনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব দুই দেশের সম্পর্ককে কতটা প্রভাবিত করবে, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন