ছবি: সংগৃহীত
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা ইতোমধ্যে যুদ্ধের আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরসহ কয়েকটি স্থানে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে জবাবে পাল্টা হামলা চালানো শুরু করেছে পাকিস্তানও।
বর্তমানে দুই দেশের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ফলে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। এ কারণে পারমাণবিক শক্তিধর দুই রাষ্ট্রের যুদ্ধের মতো চূড়ান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ‘চিন্তিত’ বিশ্বনেতারাও। খবর রয়টার্স ও এপি’র।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে দু’পক্ষকেই শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্বনেতারা।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার (৬ই মে) মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদসহ আজাদ কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ২৪টি ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। ভারতের দাবি এ হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন নিহত হন; পাশাপাশি আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
পাকিস্তানে ভারতের এ হামলা ঘিরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এটিকে ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘মাত্র এ সম্পর্কে শুনলাম। আমার মনে হয়, অতীতের কিছু ঘটনার উপর ভিত্তি করে মানুষ জানত যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে। তারা বেশ কয়েক দশক ধরে লড়াই করছে। আশা করি, এটি খুব দ্রুত শেষ হবে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় সামরিক অভিযান নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের মহাসচিব। দুই দেশকেই সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান তিনি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সামরিক সংঘাত বিশ্ব বহন করতে পারে না।‘
যুক্তরাষ্ট্র এ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। আশা করি, এটি দ্রুত শেষ হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ভারতীয় ও পাকিস্তানের নেতৃত্বকে নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘চীন মনে করছে, পাকিস্তানে ভারতের সামরিক অভিযান দুঃখজনক। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা বেশ উদ্বিগ্ন। দুই পক্ষকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করার, শান্ত থাকার, সংযম প্রদর্শনের এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে, এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
জাপানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গত ২২শে এপ্রিল কাশ্মীরে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জাপান তীব্র নিন্দা জানায়। একইসঙ্গে আমাদের উদ্বেগ, পরিস্থিতি আরও প্রতিশোধমূলক বিনিময়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযম প্রদর্শন এবং সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য জোরালোভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।’
ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে দেশটিতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার বলেন, ‘ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইসরায়েল। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত যে, নিরপরাধদের বিরুদ্ধে তাদের জঘন্য অপরাধ থেকে লুকানোর কোনো জায়গা নেই।‘
দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর ভারত ও পাকিস্তানকে ফ্রান্স সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন সুলতান বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শন, উত্তেজনা কমাতে এবং আরও উত্তেজনা রোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এইচ.এস/