প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম বড় টেক্সটাইল রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে উল্লেখ করে বলা হয়, টেকসই ফ্যাশনে নেতৃত্ব দেওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ টন প্লাষ্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, যার মাত্র ৩০ ভাগ পুনর্ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, ইলেকট্রনিক বর্জ্য ও কৃষি বর্জের অনিয়মিত ফেলা পরিবেশের ক্ষতি আরও বাড়ায়। পুনর্ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো এবং বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরির প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশ এই সমস্যাগুলো কমাতে পারবে এবং অর্থনৈতিক সুবিধাও অর্জন করতে পারবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে। অনেক কারখানা টেকসই চর্চার জন্য স্বীকৃত, যা বিশ্ব টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে।
এশিয়ায় তাপপ্রবাহের প্রভাব আরও গুরুতর হয়ে উঠছে, যেখানে হিমবাহ গলানোর কারণে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের পানির নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কাপড়ের বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং পুরনো পোশাকের বাজার প্রচারের মাধ্যমে শিল্পটি পরিবেশের ক্ষতি কমিয়ে মুনাফা বাড়াতে পারে। কৃষি বর্জ্য, যেমন ধানের তুষ ও পাটের উপজাত, জৈবশক্তি ও জৈব সারের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা টেকসই চাষাবাদে সহায়তা করবে। বৃত্তাকার মডেল বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যে সহায়ক হতে পারে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারে।
আরো পড়ুন : দেশের সব পোশাক কারখানা খুলেছে, উৎপাদন স্বাভাবিক
উল্লেখ্য জলবায়ুু বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সদ্য সমাপ্ত কপ-২৯ সম্মেলন, যা বাকুতে অনুষ্ঠিত হয়, ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর অন্তত ৩০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য গ্রহণ করেছে। এই প্রক্রিয়ায় উন্নত দেশগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসাথে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতি বছর ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার সমন্বিত জলবায়ু কার্যক্রমে অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
জলবায়ুু পরিবর্তনের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, তাই সার্কুলার ইকোনমি মডেল গ্রহণ করা শুধু প্রয়োজনীয় নয়, এটি একটি বড় সুযোগও বটে। দ্রুত বিকাশমান একটি দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দূষণ এবং সম্পদ হ্রাসের মতো পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হচ্ছে। সার্কুলার ইকোনমিতে রূপান্তর এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
একদিকে পরিবেশগত অবক্ষয় এবং সম্পদের সংকট যখন বৈশ্বিক আলোচনার শীর্ষে, তখন সার্কুলার ইকোনমি এক নতুন সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী রৈখিক অর্থনীতি যেখানে ‘নাও-তৈরি করো-ফেলে দাও’ মডেলে পরিচালিত হয়, সেখানে সার্কুলার ইকোনমি টেকসই, দক্ষতা এবং সম্পদ পুনঃব্যবহারের উপর জোর দেয়। এটি পণ্য উৎপাদন, ব্যবহার এবং বর্জন পদ্ধতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে, যা বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে।
সার্কুলার ইকোনমি তিনটি প্রধান নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে- বর্জ্য এবং দূষণ দূর করা; পণ্য এবং উপকরণ ব্যবহারে স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করা এবং প্রাকৃতিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা। এই নীতিগুলো পণ্যের জীবনচক্র বাড়ানো, উপকরণের পুনঃব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ এবং বর্জ্য হ্রাসে কাজ করে। এর ফলে সম্পদ সংরক্ষণ, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস, দূষণ মোকাবেলা এবং নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু উন্নত দেশ ইতিমধ্যে সার্কুলার ইকোনমির সম্ভাবনা দেখাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। নেদারল্যান্ডস ২০৩০ সালের মধ্যে কাঁচামাল ব্যবহারের অর্ধেক কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সুইডেন গৃহস্থালির ৯৯ভাগ বর্জ্য শক্তিতে রূপান্তরিত করছে। আউটডোর পোশাক ব্র্যান্ড পাটাগোনিয়া পোশাক মেরামত এবং পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে টেকসই নিশ্চিত করছে, যা বর্জ্য হ্রাস ও সার্কুলার কার্যক্রমের উদাহরণ।
কেসি/এস/কেবি
খবরটি শেয়ার করুন