বৃহস্পতিবার, ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৭শে ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ৬১ বছর পর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে ছাড়লেন চোই *** নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে পাকিস্তান হাইকমিশনারের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক *** তলেতলে আ.লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সব ভোট নিয়েছে শিবির: মির্জা আব্বাস *** নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় আসা কে এই সুশীলা কার্কি *** জাকসু নির্বাচন আজ, এখনো মেলেনি ডোপ টেস্টের ফলাফল *** শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেবেন মাহমুদুর রহমান-নাহিদ ইসলাম *** নেপালের কারাগার থেকে কমিউনিস্ট নেতা টপ বাহাদুরও পালিয়েছেন *** গাজায় ত্রাণ কার্যক্রমে নিরাপত্তার দায়িত্বে ইসলামবিরোধী আমেরিকান বাইকার গ্যাং *** নেপাল থেকে জামালদের ফেরাতে বিশেষ ফ্লাইট, অপেক্ষা অনুমতির *** ঘুষকাণ্ডে বিআইডব্লিউটিএর দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত

ভারতের আলোচিত ‘বিয়ে বোমা’ মামলার রায় ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৭:০৯ অপরাহ্ন, ২৮শে মে ২০২৫

#

বিয়ের আসরে বর সৌম্য শেখর সাহু ও কনে রিমা। ছবি: বিবিসি

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওডিশা রাজ্যে বহুল আলোচিত ‘বিয়ে বোমা’ মামলায় সাবেক এক কলেজ অধ্যক্ষকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ২০১৮ সালে একটি পার্সেল বোমা পাঠিয়ে এক নবদম্পতির ঘরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বর ও তার বৃদ্ধ পিতামহীকে হত্যা এবং কনে রিমাকে গুরুতর আহত করার অপরাধে ৫৬ বছর বয়সী পুঞ্জিলাল মেহেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। খবর বিবিসির।

আজ বুধবার (২৮শে মে) বিবিসি জানিয়েছে—হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিস্ফোরক আইনে পুঞ্জিলালকে অভিযুক্ত করেন বিচারক। তবে মামলাটিকে ‘দুর্লভতমের মধ্যে দুর্লভ’ আখ্যা দিয়ে মৃত্যুদণ্ডের বদলে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন।

ওডিশার বোলাঙ্গির জেলার শান্ত শহর পাটনাগড়ে ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। মাত্র পাঁচদিন আগে বিয়ে করা সৌম্য শেখর সাহু নামে ২৬ বছর বয়সী এক সফটওয়্যার প্রকৌশলীর বাড়িতে এসেছিল একটি পার্সেল। ছত্তিশগড়ের রায়পুর থেকে পাঠানো ওই পার্সেলকে একটি বিয়ের উপহারের মতো দেখাচ্ছিল।

কৌতূহল নিয়ে পার্সেলটি খোলার সময়ই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থলেই মারা যান সৌম্য ও তার ৮৫ বছর বয়সী পিতামহী জামেমানি সাহু। নববধূ রিমা মারাত্মক আহত হন—তার শরীর পুড়ে যায়, কানের পর্দা ফেটে যায় এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।

প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনার কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ। পার্সেলটি পাঠানো হয়েছিল ভুয়া নাম ব্যবহার করে। আর এটি পাঠানো হয়েছিল এমন একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে যেখানে সিসিটিভি ছিল না এবং প্যাকেট স্ক্যানও করা হয়নি। বোমাটি বাসে করে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে পৌঁছায়।

মামলাটির মোড় ঘুরে যায় গত এপ্রিলে। সে সময় একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি পুলিশের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। এতে দাবি করা হয়, তিনজন ব্যক্তি ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন এবং এখন তারা পুলিশের নাগালের বাইরে। চিঠিতে বরের বিশ্বাসঘাতকতা, অর্থ এবং একজন অজ্ঞাত প্রেমিক বা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি বন্ধ করতেও বলা হয় পুলিশকে।

পুলিশ বুঝতে পারে, চিঠির লেখক তদন্তের এমন কিছু তথ্য জানেন, যা শুধু প্রকৃত দোষীই জানতে পারেন। চিঠির ভাষা ও লেখার ভঙ্গি দেখে নিহত সৌম্যর কলেজশিক্ষক মায়ের সন্দেহ হয়, এটি তার এক সহকর্মী পুঞ্জিলাল মেহেরের হাতের লেখা হতে পারে। মেহের ছিলেন সৌম্যর মায়ের কলেজেরই সাবেক অধ্যক্ষ। 

পুঞ্জিলালকে বদলি করে ওই পদে বসেছিলেন সৌম্যর মা। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই ঘটনার সূত্র ধরে পুঞ্জিলাল দীর্ঘদিন ধরে পেশাগত প্রতিহিংসা পোষণ করে আসছিলেন।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পুঞ্জিলাল স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, তিনি দীপাবলির সময় সংরক্ষিত আতশবাজি থেকে বারুদ সংগ্রহ করে বোমা তৈরি করেছিলেন। পরে সেটি তিনি রায়পুর থেকে কুরিয়ারে পাঠান এবং তদন্তের নজর এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ফোন বাড়িতে রেখে যান। এ ছাড়া কোনো টিকিট না কেটেই তিনি রায়পুর যাত্রা করেছিলেন।

মর্মান্তিক হলেও ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিত এ হামলার ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বিস্ফোরণের ঠিক একদিন আগে পর্যন্তও পুঞ্জিলাল ছিলেন অনুষ্ঠানের অতিথি। এমনকি নিহতদের শেষকৃত্যেও তিনি অংশ নেন।

সাত বছরের তদন্ত ও বিচার শেষে অবশেষে দোষী সাব্যস্ত হন পুঞ্জিলাল। এ রায়ে বিচার পেয়েছে সাহু পরিবার। তবে রিমার জীবনের ক্ষত হয়তো কখনোই পূরণ হবে না।

এইচ.এস/

ভারত

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন