রবিবার, ২০শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক: গোপালগঞ্জে প্রশাসন চাইলে রক্তপাত এড়ানো যেত *** পাকিস্তানকে উড়িয়ে ৯ বছর পর জিতল বাংলাদেশ *** এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হওয়ার বিষয়ে তিন দলের ভিন্ন প্রস্তাব *** এত ‘নির্দোষ, নিরপরাধ, নিষ্পাপ’ সরকার আমি দেখিনি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য *** গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ এনে কোটালীপাড়ায় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন *** গোপালগঞ্জে জারি করা কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার *** পাকিস্তানকে দাঁড়াতেই দিলেন না তাসকিনরা *** শুটিংয়ে আহত হননি শাহরুখ *** ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে গ্যাসক্ষেত্র থেকেই বছরে আয় করবে ৪০০ কোটি ডলার *** ফোন করে জামায়াতের আমিরের খোঁজ নিলেন সেনাপ্রধান

ঢাকায় চলছে তদন্ত, লন্ডনে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি ধনীদের সম্পদ

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৫৮ অপরাহ্ন, ২০শে জুলাই ২০২৫

#

বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের অনেকে। ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে শত শত আন্দোলনকারীর রক্ত ঝরে। নিহত হন অনেকে। সেই কর্তৃত্ববাদী নেতার পতনের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এখনো তিক্ত বিভাজনের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

সেই রক্তক্ষয়ী আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে যদি লন্ডনে নাইটসব্রিজ টাউনহাউস এলাকায় বা সারে এলাকার কোনো একটি অংশে নেওয়া হয়, তাহলে এক ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা যাবে। এ যেন এক ভিন্ন জগৎ! বাংলাদেশে যে রক্তক্ষয়ী দৃশ্যপট রচিত হয়েছে, এর সঙ্গে অবধারিতভাবে সম্পর্কিত ব্রিটেনের কিছু বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেট। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকারের প্রভাবশালী ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা তাদের পদের অপব্যবহার করে রাষ্ট্রায়ত্ত চুক্তি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে কোটি কোটি টাকা লুট করে ব্রিটেনে সম্পত্তি কিনেছেন—এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত মে মাসে ব্রিটেনের এফবিআই হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) রহমান (আওয়ামী লীগ এমপি ও শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান) পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৯ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি জব্দ করেছে। গত বছর দ্য গার্ডিয়ান এক অনুসন্ধানে ব্রিটেনে তাদের এ বিশাল সম্পত্তির পোর্টফোলিও উন্মোচন করে।

এর তিন সপ্তাহ পর এনসিএ সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ১৭ কোটি পাউন্ডের বেশি মূল্যের সম্পদ জব্দ করে। মন্ত্রিত্বের সময় তিনি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে বিলাসবহুল টাউনহাউসসহ ৩০০ টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক হন।

দ্য গার্ডিয়ান ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক যৌথ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকায় যারা তদন্তের মুখোমুখি, তাদের কয়েকজন বাংলাদেশে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর থেকে ব্রিটেনে তাদের সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর বা পুনরায় বন্ধক দিয়েছেন। এসব লেনদেনে লন্ডনে সন্দেহভাজনদের ব্যবসার স্বাধীনতা এবং ব্রিটেনের আইন সংস্থা ও পরামর্শদাতাদের যথাযথ কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, তাদের চোখের সামনেই এসব লেনদেন হয়েছে, তারা এসব লেনদেন সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঢাকায় তদন্ত সম্পন্ন না করা পর্যন্ত এসব ব্যক্তির ব্রিটেনের সম্পত্তি জব্দ করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে ব্রিটেন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ ইস্যুতে গত জুনের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ব্রিটেন সফর করে।

লন্ডন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ শুধু এ শহরে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন বলে নয়, বরং ব্রিটেন পাচার করা অর্থে অর্জিত সম্পদ খুঁজে বের করে দেবে বলে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি চান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও সালমান এফ রহমানদের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন পদক্ষেপ আরও নেওয়া হোক।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা সম্পদ হস্তান্তরের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবগত এবং আমরা চাই ব্রিটেনের সরকার আরও বেশি করে ফ্রিজিং অর্ডার জারি করুক।’

তার এ আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেছেন বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানও মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন। গত মাসে তিনি জানান, তিনি ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিকে (এনসিএ) বেশ কয়েকজনের সম্পদ অবরুদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রিয়েল এস্টেট বাজারে এসব ব্যক্তির তৎপরতা হঠাৎ বেড়ে গেছে।

ব্রিটেনের ল্যান্ড রেজিস্ট্রির (ভূমির দলিল নথিবদ্ধকারী সংস্থা) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার নজরদারিতে থাকা ব্যক্তিদের অন্তত ২০টি ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং’ গত এক বছরে জমা পড়েছে। এ ধরনের নথি সাধারণত সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর অথবা বন্ধকি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যে তিনটি আবেদন প্রায় ২ কোটি ৪৫ লাখ পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত, যার চূড়ান্ত মালিকানা বাংলাদেশের আরেকটি বড় শিল্প পরিবারের সদস্যদের।

সম্প্রতি লন্ডনের নাইটসব্রিজ এলাকায় অবস্থিত একটি চারতলা টাউনহাউস ভবন সম্পর্কিত দুটি লেনদেন হয়েছে, এসব লেনদেনের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এটি বাংলাদেশি সেই শিল্পগোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মালিকানাধীন ছিল। তবে এ বাড়ির মালিকানা সরাসরি তার ছিল না, সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক একটি কোম্পানির মাধ্যমে এটি কিনেছিলেন তিনি।

অনুসন্ধানে গার্ডিয়ান জানতে পেরেছে, দেশের সেই বড় শিল্প পরিবারের কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে দুদক অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে তদন্ত করছে। গত এপ্রিলে সম্পত্তিটি আপাতদৃষ্টিতে বিনামূল্যে ব্রুকভিউ হেইটস লিমিটেড নামক ব্রিটেন-ভিত্তিক একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ব্রুকভিউয়ের মালিক অরবিস লন্ডনের একজন পরিচালক। এ অরবিস লিচেনস্টাইন ও সিঙ্গাপুরে অবস্থিত একটি রিয়েল এস্টেট পরামর্শক সংস্থা এবং অতীতে তারা উল্লিখিত শিল্প পরিবারের সম্পত্তি লেনদেনে সহযোগিতা করেছে।

লন্ডনের ওই বাড়িটি পরে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে এক নবগঠিত কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কোম্পানির একমাত্র পরিচালক একজন হিসাবরক্ষক এবং অনলাইনে এ কোম্পানির কোনো পরিচিতি নেই।

ল্যান্ড রেজিস্ট্রির নথি অনুসারে, ব্রিটেনের আইনি সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সেই শীর্ষস্থানীয় শিল্প পরিবারের আরেক সদস্যের মালিকানাধীন সম্পত্তির বিষয়ে আরও দুটি ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং’ জমা দিয়েছে, যার মধ্যে সারে ও ভার্জিনিয়া ওয়াটারে অবস্থিত ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি প্রাসাদসম সম্পত্তিও রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সেই পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এর আগে পরিবারটি বলেছিল, তারা কোনো অন্যায় কাজের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে।

লন্ডন ব্রিটেন বাংলাদেশি ধনীদের সম্পদ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন