মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৬ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না *** ‘বিএসসিপিএলসি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথ পরিবহনে মাইলফলক অতিক্রম করেছে’ *** ‘পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের মতো গাজাও ফিলিস্তিনের অংশ’ *** ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে এখনো আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব *** আগামীকাল শেষ হচ্ছে মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা *** ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর শিরোপা জয় *** মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনে জনবল নিয়োগ *** স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর কারিগরি শিক্ষা হবে মূল বিষয়: ড. দেবপ্রিয় *** বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ–বাণিজ্য, বন্ধে প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ *** হজযাত্রীদের জন্য ‘লাব্বাইক’ অ্যাপ উদ্বোধন করলেন ড. ইউনূস

আমি ও আমার শহর

সাহিত্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৭:২১ অপরাহ্ন, ৫ই এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

মাহবুব রহমান

এ শহর আমার নয়, আমি এ শহরকে সাদরে গ্রহণও করি না, তবু এখানে নিত্য বসবাস। ঈদের ছুটিতে সবাই গ্রামে চলে গেলে আমি একা, সম্পূর্ণ একা। জেগে থাকি রাত, জেগে থাকি ভোর, জেগে থাকি সকাল। পাহারা দেই দেয়াল, পাহারা দেই সিঁড়ি, পাহারা দেই অনাকাঙ্ক্ষিত সব অনিশ্চয়তাকে।  

তখন দুপুর বেলা, বাতাসে কাঁপে জানালার পর্দা। দূর থেকে ভেসে আসে বাচ্চাদের কণ্ঠস্বর, ভেসে আসে টিনের গেট খোলার শব্দ। কারা যেন কল পারে জোরে জোরে কাপড় আছড়ে দেয়, আহা কলের শীতল জলের ছিটা এসে লাগে আমার গালে। তারপর আবার গেট খোলার শব্দ। কলিং বেল বেজে ওঠে, মানুষ আসে, মানুষ যায়। একটা পাখি শিস দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। আমি বসে থাকি চুপচাপ, একা। 

আর এ শহর আমার নয়, তবু এখানে বসবাস করি নিত্য। কংক্রিটের রাস্তা কামড়ে ধরে অটোরিকশা ছুটে চলে। পেছনে ফেলে ঘর্ষণের শব্দ, সামনে দ্রুত  ধাবমান, ছুটে চলে শহর ছেড়ে বিভিন্ন মফস্বল অভিমুখে। এত মানুষ ছোটে! এত গতি! এত তাড়াহুড়ো! কোথায় যায় তারা?  

মানুষ কি শেষ পর্যন্ত পৌছাতে পারে? নাকি কেবল ছুটে চলাই তার নিয়তি! এই শহরে থেকে আমি জেনেছি কিছু পরিবারের কাছে। তারা কথা বলে অনর্গল, ফেটে পড়ে হাসিতে, ঘুরে, আড্ডা দেয়, চা খায়, বলে শুধু লিকার দেন, চিনি কম। আরও বলে, দুধ চা চিনি ছাড়া। তারপর ধুমপান করে, হাসে। 

ড. ইউনুস, ফিলিস্তিন, আমেরিকা, সমন্বয়ক, গভীর সব রাজনীতির কথা বলে। আলাপ কিংবা সমালোচনা। বাসায় গিয়ে মনে পড়ে, ডিম কেনা বাকি ছিল। বৌয়ের ভর্ৎসনায় ফের গেট খুলে বের হয়, নির্জন বাজারে সদাই করে। 

রাত নামে আবার একটি দিনের সম্ভাবনা নিয়ে। আর তখন এসব কিছু ছাপিয়ে আমার বারবার মনে পড়ে সুবহ সাদিকে, গাজায় সেই মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ। আজান দিতে দিতে যিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন পৃথিবীর সব আনন্দ উল্লাস যেন ঢেকে যায় বিষাদের কালো ছায়ায়। মনে পড়ে যায়, মানুষ এত অসহায়, এত ব্যর্থ, এত অকার্যকর! ক্লান্ত আর বিষন্ন লাগে। যেন ফিলিস্তিনের সেই সদ্য কিশোর চিৎকার করে বলে, আর একবার শিকল ছেড়ে দে মা, দেখি মরিয়া। 

চারদিকে এত এত নিরাপত্তাহীনতা। তবে কেন আমি এই শহরে পড়ে আছি একা একা। আমি যেন অভিনয় মঞ্চে একা, একক প্রহসনে। 

তাই গভীর রাতে এ শহর অরক্ষিত রেখে। আমি বের হই, বের হই- মফস্বলে যাবো বলে। তালমা নদী আর নিথুয়া পাথার পেরিয়ে, আমার গ্রামের বাড়ি। নিকানো উঠান যেন ডাকে। আর দরজার পাশে ডালিম গাছে এখন অজস্র ফুল ফুটে আছে। গ্রামে গেলে দেখবো জলে ভরা ধানখেত, মাথার ওপর সুনীল আকাশ, শুভ্র সাদা মেঘ। কতদিন দেখি না দু’চোখ ভরে।   

মাহবুব রহমান, নিউ মার্কেট, পঞ্চগড়

আমার শহর আমার গ্রাম

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন