ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষ, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় পাঁচজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)।
এ ধরনের ঘটনা নাগরিক নিরাপত্তা, সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠনটি।
আজ শনিবার (১৯শে জুলাই) এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়, যাতে স্বাক্ষর করেন শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মীসহ ২৩ জন নাগরিক।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৬ই জুলাই গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক সমাবেশ শেষে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের একটি অংশ সেখানে হামলা চালায়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনতার ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে।
এতে দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), সোহেল মোল্লা (৪১), ইমন (২৪) এবং পরে ১৮ই জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমজান মুন্সী (২৮) নামের আরও এক নাগরিকের মৃত্যু হয়। আহত অনেকেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যাদের কারও কারও অবস্থা সংকটাপন্ন।
এইচআরএফবির ভাষ্য, জনসমক্ষে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত শুধু অমানবিক নয়, তা বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সরাসরি লঙ্ঘন। এ ধরনের অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগ কোনো অজুহাতেই গ্রহণযোগ্য নয়; বরং এটি স্পষ্টতই রাষ্ট্রের জবাবদিহির অভাবের বহিঃপ্রকাশ বলেই বিবেচিত।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে স্পষ্ট দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যরা জনতার দিকে গুলি ছুড়ছেন। এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জে পুলিশ কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করেনি। অন্যদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে’ হস্তক্ষেপ করেছে এবং ‘আত্মরক্ষার্থে’ বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা আইএসপিআর দেয়নি।
দেশের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে বিবৃতিতে সব পক্ষকে সংযমী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে এইচআরএফবি।
গোপালগঞ্জে হামলা, বলপ্রয়োগ ও প্রাণহানির ঘটনা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং নাগরিক নিরাপত্তার ওপর গভীর আঘাত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত, দায়ীদের বিচার নিশ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এইচআরএফবির বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, রাজা দেবাশীষ রায়, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, খুশী কবির, ডা. ফাওজিয়া মোসলেম, সঞ্জীব দ্রং, শামসুল হুদা প্রমুখ।
খবরটি শেয়ার করুন