ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের ৯ই মে—পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ। দেশটির ইতিহাসে তৈরি হয় এক নজিরবিহীন মুহূর্ত। ইমরান খানের হাজার হাজার সমর্থক রাস্তায় নেমে সেনাবাহিনীসংশ্লিষ্ট একাধিক ভবন ও স্থাপনায় হামলা চালায়।
লাহোরে পুড়িয়ে দেয় এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার বাসভবন, আক্রমণ চালায় রাওয়ালপিন্ডির জেনারেল হেডকোয়ার্টারসহ অন্যান্য সামরিক অবকাঠামোতেও। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তখন তুঙ্গে।
মাত্র দুই বছর পর, সেই চিত্র একেবারে ভিন্ন। ১১ই মে ২০২৫—আবারও পাকিস্তানজুড়ে রাজপথগুলোতে জনসাধারণের ঢল। তবে এবার আর সহিংসতা নয়, বরং সেনাবাহিনীর প্রশংসা করতে রাস্তায় নেমেছে তারা। হাজারো মানুষের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সেনাবাহিনীর জয়ধ্বনি। হাতে জাতীয় পতাকা আর সমবেত সুরে নানা দেশাত্মবোধক গানে মুখরিত রাজপথ।
সেনাবাহিনীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে এ আমূল পরিবর্তনের পেছনে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতের আকস্মিক হামলা রুখে দিয়েই মূলত পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মন পেয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। চারদিনের সংঘাতের পর তাই তাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। খবর আল জাজিরার।
এমনকি কারাবন্দী ইমরান খানও সেনাবাহিনীর সমর্থনে কথা বলেছেন। আইনজীবীদের মাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়ে তিনি তার সমর্থকদের সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। গত ১৩ই মে সামাজিক মাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির মনোবলই সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি। এ কারণেই আমি বারবার জোর দিয়ে বলেছি, জনগণকে আমরা ত্যাগ করতে পারি না। আমাদের বিচারব্যবস্থায় প্রাণ ফিরিয়ে আনতেই হবে।’
সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষটি সূত্রপাত মূলত এপ্রিলের শেষ দিকে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় ২৬ জন পর্যটক। কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ না দিয়েই পাকিস্তানকে এ হামলার জন্য দায়ী করে গত ৭ই মে গভীর রাতে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এবং পাঞ্জাব প্রদেশে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়।
চারদিনের সংঘর্ষে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়, সেটিকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৯ই মে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছিল। তাই এটিকে কালো দিবস বলে আখ্যা দেয় পাকিস্তান।
এর একদিন পর ১০ই মে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। পরদিন, পাকিস্তান সরকার দিনটিকে হক্কানি জিহাদের দিন বা ন্যায়ের জন্য লড়াই বলে ঘোষণা করে।
এ সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর পাকিস্তানের জনমনে সেনাবাহিনীর প্রতি যে সমর্থনের ঢেউ উঠেছে, তা সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরল। গ্যালাপ পাকিস্তানের এক জরিপে দেখা গেছে, ১১ই থেকে ১৫ই মে পর্যন্ত পরিচালিত এক জরিপে ৯৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেছেন, পাকিস্তান এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে।
৮২ শতাংশ সেনাবাহিনীর পারফরম্যান্সকে ‘খুব ভালো’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন, আর ৯২ শতাংশ জানিয়েছেন, সংঘর্ষের পর সেনাবাহিনী সম্পর্কে তাদের অবস্থান ইতিবাচকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন