শুক্রবার, ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৭শে ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** জাকসুর ভোট গ্রহণের ৫ ঘণ্টা পর গণনা শুরু *** গাঁজা উৎপাদন কেন্দ্রকে তীব্র গন্ধ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ *** ভোটের আগে ইসির ৬১ কর্মকর্তার রদবদল *** ৪৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ *** জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকার বিরোধিতা করার নৈতিক অবস্থান আ. লীগ, বিএনপির নেই *** সেনা কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়ল *** দক্ষিণ এশিয়ায় চার বছরে তিন সরকারের পতন, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসছে কী *** ডাকসুতে ছাত্রশিবিরের বিজয়ে জাতীয় পার্টির অভিনন্দন *** জেন-জি বিক্ষোভে সমর্থন জানালেন নেপালের সাবেক মাওবাদী প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড *** নেপাল থেকে ঢাকায় ফিরলেন জামালরা

গরিবের বন্ধু ইউপি সদস্য মাইকেল ঢালী, সংসার চালান রিকশা চালিয়ে

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, ১১ই মে ২০২৩

#

শরীয়তপুরের নড়িয়ার মোক্তারেরচর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাইকেল ঢালী রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মাইকেল ঢালী। বয়স ৪৪ বছর। এলাকার মানুষের কাছে অবশ্য তিনি ‘রিকশাওয়ালা নিউ মাইকেল’ নামে পরিচিত। রিকশা চালাতে চালাতে মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা জাগে তার। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি রিকশা চালানো বাদ দেননি। রিকশা চালিয়ে সংসার চালান, পাশাপাশি ভোটারদের সুখ-দুঃখের খবর জানতে রিকশা চালিয়ে বাড়ি বাড়ি যান।

মাইকেল পোরাগাছা গ্রামের বাসিন্দা। গত বছরের জানুয়ারিতে ইউপি নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন। ওই গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুর রব ঢালী ও নীলুফা বেগম দম্পতির ছেলে মাইকেল। কিশোর বয়সে মা–বাবাকে হারান। পরে আট ভাইবোনের সংসারে জীবিকার তাগিদে তিনি ঢাকায় গিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা চালানোর কাজ শুরু করেন। ১০ বছর পর তিনি গ্রামে ফিরে যান। শুরু করেন রিকশা চালানো। ১৬ বছর ধরে তিনি রিকশা চালাচ্ছেন।

মাইকেল বলেন, রিকশায় গ্রামের মানুষকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পথে গল্প হয়। গল্প করতে করতে এলাকার দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে তার সখ্য হয়। অনেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে ভোটের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেন না বলে অনেকের অভিযোগ। সেসব দেখে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা জাগে তার। ২০১৬ সালে তিনি ইউপি নির্বাচনে সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কয়েক ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। গত বছর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তিনি আবার প্রার্থী হন। ভোটাররা তাকে জয়ী করেন।

মোক্তারেরচর ইউপি সূত্র জানায়, গত বছর জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর মার্চে শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাইকেল ঢালী। গত এক বছরে তিনি তার এলাকার দরিদ্র মানুষকে সরকারি নানা সহায়তা পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন।

পোরাগাছা গ্রামের আলমগীর ঢালী বাক্‌প্রতিবন্ধী। তার অভাবের সংসার, তবে কেউ তাকে সহায়তা করেছিলেন না। মাইকেল নির্বাচিত হওয়ার পর আলমগীরের পরিবারকে খাদ্যসহায়তার ভিজিডি কার্ড দিয়েছেন। আলমগীরের স্ত্রী ফুলমালা বলেন, ‘আমরা অনেক গরিব মানুষ। সহায়তা পাচ্ছিলাম না। মাইকেল ভাই নির্বাচিত হওয়ার পর আমরা প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছি। ভাই গরিব মানুষের জন্য কাজ করছেন।’

পোরাগাছা গ্রামের লোকরি মাতবর বয়স্ক ভাতা পেতেন না। ইউপি সদস্য মাইকেল তার কাগজপত্র নিয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ে জমা দিলে বয়স্ক ভাতা পেতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আমাদের পাত্তা দিতে চায় না। কিন্তু গরিবের বন্ধু রিকশাওয়ালা মাইকেল আমাদের কষ্ট বোঝে। তাই তো বয়স্ক ভাতা পেয়েছি।’

মাইকেলের কোনো কৃষিজমি নেই। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২ শতাংশ জমিতে থাকা বসতঘরে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি। রিকশা চালিয়ে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পান। এই আয়ে সংসার চালান, ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করান।

মাইকেলের স্ত্রী লিপি বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর শিক্ষাদীক্ষা ও টাকাপয়সা নেই। তবে তার আত্মাটা বড়। আমাদের মতো দরিদ্র মানুষের সেবা করার জন্য তিনি ইউপি সদস্য হয়েছেন। মানুষের কাজ করতে গিয়ে আয়রোজগার কম হয়, সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাতে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আমার স্বামী যেন মানুষের ভোটের মর্যাদা রাখতে পারেন।’

ইউপি সদস্য মাইকেল ঢালী বলেন, ‘চেষ্টা করছি সাধ্যমতো মানুষের পাশে থাকতে। জনপ্রতিনিধি হয়েছি, মানুষের অধিকার আদায়ে পাশে থাকছি। কিন্তু নিজের পরিবারকে তো বাঁচাতে হবে। তাই আয় করার জন্য রিকশা চালাই। রিকশা চালানো ছেড়ে দিলে সংসার চলবে কীভাবে?’

আরো পড়ুন: শেরপুরে বৌভাতে আনা সব উপহার ফেরত দিলেন ছেলের বাবা

মোক্তারেরচর ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা শেখ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ অনুযায়ী ৬ নম্বর ওয়ার্ডে যা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বিতরণ করছেন মাইকেল। মাইকেলের কার্যক্রমে ওই ওয়ার্ডের মানুষ সন্তুষ্ট। রিকশা নিয়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের খোঁজ খবর নেন তিনি।

এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, ‘সমাজের টাকাওয়ালা প্রভাবশালীরা জনপ্রতিনিধি হন। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষের জনপ্রতিনিধি হওয়ার নজির কম। মাইকেল ইউপি সদস্য হওয়ার পরও তার জীবিকার মাধ্যম রিকশা চালানো ছাড়েননি। তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খুবই ভালো ধারণা পেয়েছি। এলাকার সাধারণ মানুষ তাকে খুবই ভালোবাসে। তিনি বর্তমান সমাজের জন্য এক বড় দৃষ্টান্ত। স্থানীয় প্রশাসন তার ভালো কাজের পাশে থাকবে।’

এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/

জেলা নড়িয়া শরীয়তপুর ঢাকা বিভাগ ইউএনও রিকশা জনপ্রতিনিধি 

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন