ছবি: দ্য ডিপ্লোমেট
জেমস কাইজোকা
উন্নয়ন সহায়তার জন্য জাপানের নতুন পরিকল্পনা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের দর্শনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তাছাড়া এটি ভূ-কৌশলের ক্ষেত্রে জাপানের অন্যতম বৃহত্তম জাতীয় শক্তির ভূমিকাকেও প্রসারিত করে।
জাপানের নীতিনির্ধারকেরা বিশ্বাস করেন যে নিরাপত্তা এবং আইনের শাসন ছাড়া উন্নয়ন সহায়তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।
এজাতীয় পরিকল্পনা বর্তমান প্রেক্ষাপটের জন্য একদম উপযোগী। এটি জাপানকে সারাবিশ্বের ভালো করার জন্য সক্ষম এমন প্রতিমূর্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাছাড়া ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় এবং চীনের শক্তি সম্প্রসারণ ও ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের মতো স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যে, জাপান গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্যও রক্ষা করে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের দর্শনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত এই পরিকল্পনাটি পৃথিবীতে শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
জাপানের নতুন অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিসটেন্স ফ্রেমওয়ার্কের উপর আমার পূর্ববর্তী প্রবন্ধে আমি উল্লেখ করেছিলাম, দেশে বা বিদেশে প্রচলিত জাপানি উন্নয়ন সহায়তার বিষয়ে সামান্য বিতর্ক রয়েছে। অনেকের কাছেই এটি শান্তিপূর্ণ। তবে এ পরিকল্পনা জাপানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানের জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
নতুন চার্টারের প্রথম অনুচ্ছেদে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং মুক্ত ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং বহুপাক্ষিকতাবাদ এর চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। সনদটি খাদ্য সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, ঋণসংকট এবং মানবিক সংকটের মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ রেখা টানে।
আবে এর অধীনে ২০১৫ সালে প্রবর্তিত পূর্ববর্তী সংশোধনটি ইতিমধ্যে জাপানের উন্নয়ন সহায়তাকে ভূ-কৌশলের সাথে আরও সংযুক্ত করেছে। এটি জাপানের উল্লিখিত শান্তিতে সক্রিয় অবদান এর অংশ হিসেবে উন্নয়ন সহায়তার কাঠামোকে অন্তর্ভুক্ত করে। তবে ২০২৩ সালের সনদের তুলনায় পূর্ববর্তী সনদের ভাষা সংযত ছিল। ২০১৫ সালের সনদে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে জাপানকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিপরীতে, নতুন সনদটি আত্মবিশ্বাসের সাথে মুক্ত এবং উন্মুক্ত বিশ্বের কথা উল্লেখ করে। বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য জাপান যে একটি শক্তি হতে পারে তারও ইঙ্গিত দেয় সনদটি।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাপানের নিরাপত্তা নিষেধাজ্ঞা নিরাপত্তার বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের অবাধে কাজ করার ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিল। তবে বর্তমানে জাপানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকির সম্মুখীন। চীন জাপানের আকাশসীমায় পৌঁছানোর চেষ্টা বারবার করেছে। অন্যদিকে ২০২২ সালে উত্তর কোরিয়া রেকর্ড সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। তাই জাপানের সামরিক বাহিনি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত একদম সঠিক ও যুক্তিযুক্ত।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বিষয়ে জাপানি নীতিনির্ধারকদের ক্রমবর্ধমান আস্থা এবং এই আস্থার প্রতিফলনকারী নীতিগুলোর প্রতি সাধারণ জনগণের আপাতদৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্যতা বর্তমানে সময়োপযোগী। নতুন ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন চার্টার জাপানকে বিশ্ব যে বৃহত্তর চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত করে। তাছাড়া এটি আন্তর্জাতিক সঙ্কট এবং সংঘাতের প্রবল প্রভাবগুলোকে স্বীকার করে নিরাপত্তা এবং উন্নয়নকে দৃঢ় করে।
গত এক বছরে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাবও এখানে দেখা যায়। অতি সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেনের নোভা কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস করে মানবিক সংকট তৈরি করেছে যার প্রভাব বেশ কয়েক বছর ধরে থাকবে এবং এই অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া ২০২১ সালের বন্যায় ৫৮৪,০০০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেখানে প্রায় চল্লিশ লাখ টন শস্য ও তৈলবীজ উৎপন্ন হয়েছিল।
এই ধরনের ঘটনার দিকে লক্ষ্য রেখে নতুন ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন চার্টার স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে।
এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় জাপান একটি অগ্রণী অবস্থানে রয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির বিস্তৃত অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার পরিচয়ও পাওয়া যায় এতে। জাপান যদি প্রকৃতপক্ষে শান্তিতে সক্রিয় অবদান রাখতে চায়, তাহলে এগুলোই জাপানের ভূ-কৌশলগত এবং উন্নয়ন সহায়তা লক্ষ্যগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক শক্তি এবং সমন্বয়ের ক্ষেত্র বলে বিবেচিত হবে।
নতুন ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন চার্টারটি অবশ্য সবজায়গা থেকেই প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এটি জাপানের শান্তিতে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখার আকাঙ্ক্ষাকে ইঙ্গিত করে।
আরো পড়ুন: হাসতে ভুলে গেছেন জাপানের মানুষ, যাচ্ছেন প্রশিক্ষকের কাছে